‘ম্যানার’ শেখানোর নামে ব্র্যাকের শিক্ষার্থীকে মারধর সিনিয়রদের
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ‘ম্যানার শেখানো’র নামে আহমেদ আতিফ আবরার নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। গত আগস্টের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজধানীর মহাখালীর অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ভেতরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯-২০ ব্যাচের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী, নাম আহমেদ আতিফ আবরার। এরপর এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বিচারের আশ্বাস দিলেও ঘটনার এক মাস পেরোলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, লিফটের সামনের করিডোরে এসির তাপমাত্রা কমানো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী নিরাপত্তা কর্মীর সাথে কথা কাটাকাটি সংক্রান্ত বিষয়ে আহমেদ আতিফ আবরারকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৩-১৪ জন শিক্ষার্থী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮-১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর এক বছরের সিনিয়র। ঘটনাটি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা শাখার কর্মকর্তাদের সাথে হলেও এর সাথে শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে তা মারামারির মতো ঘটনায় রূপ নেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হামলার ঘটনায় নাম এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮-১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার তাহমিদ গালিব, আসিফ সাদনান সুপ্ত, নিশাত খান এবং শাহরিয়ার সালমান রাব্বিসহ তাদের আরও ৯-১০ জন সহযোগীর। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সুপারভাইজার) সিরাজুল ইসলামের উপস্থিতিতেই ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে হামলায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা; তখন তিনি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর।
এ বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে বিচার করার কথা থাকলেও, এখনো তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারা শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে; বিচারের বিষয়ে আমি তাদের কোনো আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া আমাকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানোর কথা থাকলেও তারা এখন আমাকে আংশিক ফুটেজ দেখাচ্ছে—ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এছাড়াও মারধর করার পর আহত শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সেন্টারে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন শাখায় কর্মরত মুক্তার হোসেন বাবুলসহ উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারা টেনে-হিঁচড়ে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। হামলায় অংশ নেওয়া শাহরিয়ার সালমান রাব্বি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, এসির তাপমাত্রা কমানোর মতো সামান্য একটি বিষয় নিয়ে কোন আমাদের উপর মহল, প্রক্টর অফিসে যাবো—এসব বিষয় নিয়ে আমার সাথে নিরাপত্তা কর্মী সালমার কথা কাটাকাটি হলে তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী আসিফ সাদনান সুপ্তকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর সুপ্তের সাথে থাকা অন্যরা আমার সাথে বাদানুবাদে জড়ায়; এরপর তারা আমার উপর চড়াও হয় এবং আমি তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা আমাকে মারধর করতে শুরু করে। আমাকে ঘুষি মারা হয়, আমার শার্ট ছিঁড়ে ফেলা এবং চশমা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এরপর সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে প্রক্টর অফিসে এমন ভাবে টেনে নিয়ে যায় যেন আমিই অপরাধী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আহমেদ আতিফ আবরার জানান, এ বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে বিচার করার কথা থাকলেও, এখনো তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারা শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে; বিচারের বিষয়ে আমি তাদের কোনো আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া আমাকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানোর কথা থাকলেও তারা এখন আমাকে আংশিক ফুটেজ দেখাচ্ছে। শুরুতে সিসিটিভির ফুটেজ রয়েছে বলে জানানো হলেও এখন তারা বলছেন—১১টি ক্যামেরা নষ্ট। সর্বশেষ চূড়ান্ত মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর আমি আমার করনীয় ঠিক করবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আবরার তাহমিদ গালিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত জানাবে; তাই তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এ ঘটনার বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রুবানা আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। বিষয়টি নিয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সবসময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শৃঙ্খলাজনিত ইস্যুতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সর্বদাই জিরো টলারেন্স পলিসি মেনে চলে। এক্ষেত্রেও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শৃঙ্খলা কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির গোপনীয়তার নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় না।’