১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৫৩

গ্র্যাজুয়েটদের চেয়েও বেশি ইনকাম করছে অনেক নন-গ্র্যাজুয়েট: শিক্ষা উপমন্ত্রী

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের দেশে অনেক গ্র্যাজুয়েট আছে। তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। কিন্তু গ্র্যাজুয়েট ছাড়াও অনেক সফল ব্যক্তি আছেন। তাদেরকেও দেখতে হবে। সমাজে তাদেরকে নিচু করে দেখলে চলবে না।

এসময় তিনি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, নন-গ্র্র্যাজুয়েট একজন ব্যক্তি ছোট একটি ব্যবসা করে আপনার চেয়েও বেশি ইনকাম করছে। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা এবং পুরো পৃথিবীর বাস্তবতা। আপনার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে এবং উচ্চশিক্ষা অর্জন হয়েছে। এখন আপনাকে কর্মমুখী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে। 

আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী ৩ হাজার ১০৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এছাড়া ইউনিভার্সিটির চারটি অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএপ্রাপ্ত মোট ১০ জন শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক দেয়া হয়।  

মহীবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী গবেষণা কিংবা উচ্চতর শিক্ষায় যাবেন। তাদের কথাটা ভিন্ন। তাদের ক্ষেত্রেও বলবো, নানান ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যতে গবেষণা মুখী হওয়ার জন্য সহজেই তাদেরকে অণুপ্রাাণিত করবে।

এতো সংখ্যক গ্র্যাজুয়েটদের একসঙ্গে চাকরির ব্যবস্থা চীন-আমেরিকাসহ পৃথিবীর কোন দেশের অর্থনীতিতেই করা সম্ভব না উল্লেখ করে এসময় নবীন গ্র্যাজুয়েটদের বিনা পারিশ্রমিকে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আহবান জানান তিনি।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকরি অথবা ব্যাংকের চিন্তা না করে দক্ষতার জায়গায় নিজেকে আবিস্কার করতে হবে। আধুনিক শিল্প ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। ইংরেজি সারাবিশ্বে যোগাযোগের মাধ্যমে, এটি এখন শুধু কারো মাতৃভাষা নয়। সুতরাং ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে, এটি চাকরির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতার জন্য শিক্ষার্থীদের সময় বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ দেশ ও সমাজ আজ আপনাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাই দেশ ও সমাজের কাছে আপনারা ঋণী। আপনারা আপনাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কখনো হতাশ হবেন না, মনে সাহস রাখবেন। মনে রাখবেন, সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে হলে আপনাদের অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ২০২১ সালে এ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ বিপ্লব সাধন করেছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ পরিণত করা। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আজ্জম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ২০১৯ সালের ফল সেমিস্টার থেকে ২০২৩ সালের স্প্রিং সেমিস্টার পর্যন্ত সময়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী ৩ হাজার ১০৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য। চারটি অনুষদ থেকে মোট ১০ জন শিক্ষার্থী এ বছর স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হন। তাদের মধ্যে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পান দুজন- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের আবদুল্লাহ আল আসিফ ও ব্যবসায় প্রশাসন (এমবিএ) বিভাগের ইসরাত জাহান সানা। তিনজনকে দেয়া হয় চেয়ারম্যানস গোল্ড মেডেল। তাঁরা হলেন- আইন বিভাগের মো. ওমর ফারুক, ইংরেজি বিভাগের নূর নাজলিমা জাহান ও এমবিএ’র মো. আমিনুল ইসলাম।  

চার অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত পাঁচজন পান ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল। তাঁরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের আলিফ আল রহমান, বিবিএ’র নাদিয়া হোসেন উষা, সিএসই’র আবু রায়হান ভূঁইয়া, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মারুফা ফেরদৌসি ও আইন বিভাগের তানভীর মাহতাব।