কানাডা যেতে ছেড়েছিলেন ব্যাংকের চাকরি, সড়কেই জীবনাবসান মাহিনের
চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর কানাডা যাওয়ার কথা ছিল রিদুয়া মাহিন আলভির। এ জন্য সম্প্রতি পাওয়া ঢাকায় এবি ব্যাংকের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানাডা যাওয়া হলো না তাঁর। ঢাকা থেকে বৃদ্ধ নানির লাশ নিয়ে দিনাজপুরে বাড়িতে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় লাশ হয়ে ফেরেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর সাবেক ছাত্র মাহিন।
শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর শহরের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নুরজাহানপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা মাহিন মারা যান। প্রায় একই সঙ্গে নানি ও নাতনির মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তাদের স্বজনরা।
মাহিনের স্বজন সারোয়ার রহমান জানিয়েছেন, মাহিনের নানি মালেকা বেগমকে (৮০) মাসখানেক আগে চিকিৎসার জন্য তাঁর ছেলে প্রকৌশলী শফিকুর রহমান ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ঢাকা ল্যাবএইড হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স মালেকার লাশ নিয়ে দিনাজপুরে আসছিলেন স্বজনেরা। অ্যাম্বুলেন্সের চালকের পাশের আসনে বসা ছিলেন মাহিন ও তাঁর মামাতো ভাই আহনাফ জাহিন (২২)। পেছনে অপর একটি মাইক্রোবাসে ছিলেন শফিকুর রহমানের অফিসের দুজন কর্মচারী ও এক স্বজন।
শনিবার সকালে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ির এলাকায় নিহত মালেকা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ও স্বজনের ভিড়। ছেলের কবর জিয়ারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মা রাফিয়া আক্তারকে। কথা বলার শক্তি নেই তাঁর। শুকিয়ে গেছে চোখের পানি। দুই ছেলের মধ্যে মাহিন বড়। ছোট ছেলে আয়মান সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাঁর মামাতো ভাই আহনাফ জাহিন জানান, অ্যাম্বুলেন্সটি গোবিন্দগঞ্জ পার হওয়ার পরে চালকের চোখে ঘুম আসে। ঘোড়াঘাটের ওসমানপুর এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে চালককে চা পান করান মাহিন। ১৫ মিনিট চালককে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও করে দেন। শফিকুর রহমান মুঠোফোনে মাহিন ও তাঁকে (জাহিনকে) তাঁর অফিসের সহকর্মীর মাইক্রোবাসে ওঠার জন্য বলেন। সে সময় তিনি (জাহিন) মাইক্রোবাসে চলে যান।
তিনি বলেন, নানির লাশের পাশেই থেকে যান মাহিন। অ্যাম্বুলেন্স চলতে থাকে। ঘোড়াঘাট উপজেলার নুরজাহান মসজিদের কাছে এলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে অ্যাম্বুলেন্সটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাহিন মারা যান। অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ছিল তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাস। তাঁর চোখের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। সেই দুঃসহ স্মৃতি তিনি ভুলতে পাচ্ছেন না।
মাহিনের স্বজনরা জানিয়েছেন, মাহিনের তিন খালার মধ্যে একজন থাকেন জাপানে, একজন লন্ডনে। কিছুদিন আগে জাপানপ্রবাসী খালা দিনাজপুরে এসেছিলেন। গত বুধবার জাপান ফিরে গেছেন। বিয়ের পরে মাহিনের মা নিজ বাড়িতেই থেকে যান। মাহিনের দাদাবাড়ি চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি এলাকায় হলেও শহরের বালুবাড়ি এলাকায় নানাবাড়িতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা পেশায় একজন ঠিকাদার। মা দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত। পরিবারের বড় ছেলে মাহিন সবার প্রিয় ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যুতে পরিবার-স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।