দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করুন: শিক্ষার্থীদের প্রধান বিচারপতি
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত শিক্ষাকে সঙ্গে করে আধুনিক গবেষণালব্ধ উদ্ভাবনকে পুঁজি করে বৈশ্বিক মডেল ধারণ করতে হবে। এরসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সঞ্চারিত দেশপ্রেমে উদ্বুধ হতে হবে। তাহলেই সবাই মিলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
আজ রবিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭৫ সালে ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছিলেন- ‘আমার যুবক ভায়েরা আমি যে কর্মটি করতে যাচ্ছি গ্রামে গ্রামে এর উপর বাংলার মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করবে। আপনাদের ফুলপ্যান্ট রেখে একটু হাফপ্যান্ট পরতে হবে, পায়জামা ছেড়ে লুঙ্গি পরতে হবে আর গ্রামে গ্রামে গিয়ে কো-অপারেটিভকে সাফল্যমন্ডিত করতে হবে। আমি যুবক চাই, আমি ছাত্র চাই, আমি সবাইকে চাই’-এটাই ছিলো ছাত্রদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা। গণমানুষে তারুণ্যের তাজা শক্তি বিলিয়ে দিয়ে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য আত্মনিয়োগ করাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর আহ্বান।
তিনি আরও বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানে কৃষকদের পাশাপাশি ছাত্রদের ভূমিকার উপর বিশেষ জোর আরোপ করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘ছাত্রদের বলি একটু লেখাপড়া করো বাবার হোটেলে আর কতকাল খাবে। পয়সা-কড়ি নেই তোমাদের কষ্ট হচ্ছে জানি কিন্তু লেখাপড়া একটু করো। আন্দোলন করো আমার আপত্তি নাই, আমার জন্ম আন্দোলনের মধ্যেই। কিন্তু তোমাদের একটু মানুষ হতে হবে’।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, পৃথিবী নামক এ গ্রহে বাংলাদেশের মানচিত্র হয়তো আয়তনে নিতান্ত ছোট কিন্তু জ্ঞান-গরিমায়, বিজ্ঞান-উন্নয়নে, খেলাধুলায়, শিল্পে-সাহিত্যে ঐতিহ্য গড়ে আমরা একবিংশ শতাব্দিতে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে চাই। আমাদের তাই প্রাণভরা প্রত্যাশা ছাত্রদের কাছে এই শতাব্দী তোমরা তৈরি করো, বাঙালী শতাব্দী হিসেবে এই শতাব্দী আমরা পারবো কলুষতামুক্ত, দরিদ্রতামুক্ত, নিরক্ষরতামুক্ত, শত্রুমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। এটা পারলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।
“তাই এ দেশের শিক্ষক-ছাত্রসমাজসহ সবাইকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন সচেতনতা ও সুশৃঙ্খল, দায়িত্ববোধের স্বাক্ষর রাখি আমাদের কথায়, কাজে, আচরণে তাহলে এই বাংলার প্রতিটি ধূলিকণা স্বর্ণ সম্ভাবনার আলোকে বিকিরণ করবে। আর এভাবেই আমরা সকলে মিলে গড়তে পারবো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা।”
বেসরকারি উচ্চশিক্ষায় দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব তুলে ধরে অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উদ্যোক্তাকে অনুরোধ জানাতে চাই— আমরা যাতে মূল্যবোধও দিতে পারি, বঙ্গবন্ধু তার জীবনে যেগুলো চর্চা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু অসম্প্রায়িক ছিলেন, তিনি মানুষের মধ্যে সমতা দেখতেন, নারী ও পুরুষের সমতা দেখতেন। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিক হবে, মানুষের অধিকারের বিষয়ে স্বোচ্ছার এবং একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। আমরা যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব মূল্যবোধ শেখাতে না পারি তাহলে আমরা সুনাগরিক পারবো না। ধর্ম বা শ্রেণি বিশেষে অন্যকে নিচু করে দেখলে বিশ্ব নাগরিকও হতে পারবো না।