২৭ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৫৬

ব্র্যাকইউ ডুবুরি দলের সাফল্য উদযাপন করলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

  © টিডিসি ফটো

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রোবোটিকস প্রতিযোগিতা রোবোসাব ২০২৩-এ ব্র্যাকইউ ডুবুরির অসামান্য সাফল্য উদযাপন করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। এই উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (২৭ আগস্ট) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্র্যাকইউ ডুবুরির সদস্যদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় এবার রানার আপ হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের তৈরিকৃত স্বয়ংক্রিয় ডুবোযান ব্র্যাকইউ ডুবুরি।

রোবোনেশন এর পৃষ্টপোষকতা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার সেন্টার প্যাসেফিকের সহ পৃষ্টপোষকতায় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রান্সডেকে অবস্থিত অফিস অফ নেভাল রিসার্চ এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি মেরিটাইম ইন্ড্রাস্ট্রিকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় সেগুলোর সমাধান করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩১ জুলাই থেকে ৬ আগস্টে অনুষ্ঠিত এবছরের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে ৩৪টি দল অংশ নেয়। প্রতিযোগতায় প্রথম হয়েছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা।   

এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্র্যাকইউ ডুবুরি দলকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলর স্টিফেন ইবেলি, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেট কমিউনিকেশন এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট শামীম উজ জামান এবং ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ড্রাস্টির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আজিজুল হাকিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডাউল্যান্ড। 

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকইউ ডুবুরির সদস্যরা রোবোসাব ২০২৩-এ একেবারে শুরু থেকে রানার আপ হওয়া পর্যন্ত তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাসমূহ তুলে ধরেন। তারা তাদের বক্তব্যে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ, অধ্যবসায় এবং আত্মউৎসর্গের গল্পগুলো সবার সামনে তুলে ধরেন। ব্র্যাকইউ ডুবুরিকে একটি ধারাবাহিক উন্নয়নশীল প্রজেক্ট হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, ব্র্যাকইউ ডুবরি দলটি ভবিষ্যতে আরো সাফল্য পাবে এবং রোবোটিকসে আরো শ্রেষ্ঠত্ব বয়ে আনবে।   

ব্র্যাকইউ ডুবুরির এই অর্জনকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর ও ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ। তিনি বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে রোবোটিকসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথে অন্যতম দিশারী হতে পারে। তিনি ইন্ড্রাস্টি স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে এবং শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের এসব উদ্যোগকে সহায়তা করার আহবান জানান। 

এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন এই অর্জনকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশের জন্য ‘বিশাল পাওয়া’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, ব্র্যাকইউ ডুবুরি অনেক অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে অনেক নৌ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। রোবট ডুবুরিকে এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কাজে লাগালো সেটি দুর্ঘটনা কবলিত যান এবং মানুষকে সনাক্ত করতে পারবে এবং সেগুলোর উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। সেই সাথে এই রোবট ডুবুরিকে কাজে লাগিয়ে আমরা বঙ্গোপসাগরের নিচে থাকা বিপুল সম্পদ আহরণ করতে পারবো।

এক বার্তায় রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের হার না মানা মনোভাব এবং অসম্ভবকে জয় করার মানসিক শক্তিকে রবি সেলিব্রেট করে। ‘পারবে তুমিও’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা কোনো কাজের পেছনে যে উদ্যম, যে প্রচেষ্টা সেটাকে আরও উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। ব্র্যাকইউ ডুবুরি’র এই তরুণেরা সম্মুখীন হয়েছিল অনেক চ্যালেঞ্জের, কিন্তু তারা থেমে থাকে নি। এটাই ‘পারবে তুমিও’র মূলমন্ত্র। ব্র্যাকইউ ডুবুরি’র এই অসাধারণ সাফল্যের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।

ব্র্যাকইউ ডুবরির এমন অসামান্য সাফল্যে দলটিকে অভিনন্দন জানান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলর স্টিফেন ইবেলি। তিনি জানান, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে সবসময় সহায়তা করবে।

ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ড্রাস্টির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আজিজুল হাকিম শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণা ও উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করার বিষয়ে আহবান জানান কেননা বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে ইতিমধ্যে এই ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে। 

অনুষ্ঠানের শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সায়েন্স এর চেয়ারপারসন ড. সাদিয়া হামিদ কাজী।