আবাসন সুবিধা তৈরিতে এগিয়ে আসছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
আবাসিক হলের সুবিধা সাধারণত দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই থাকে। তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, আবাসিক হল থাকায় শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
যদিও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় পরিসরে আবাসন সুবিধা তারা দিতে পারছে না। জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ সুবিধা চালু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৬টি। যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ১১২টি। এরমধ্যে খোঁজ নিয়ে অন্তত ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল সুবিধার কথা জানা গেছে। তবে সরকারি প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আবাসন সুবিধা আছে।
জানা গেছে, দেশের বড়ো শহরগুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাওয়াদাওয়া নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় শিক্ষার্থীদের। বাধ্য হয়ে যেসব মেস বা ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীরা থাকেন সেখানে মাত্রাতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি জীবনমান নিয়ে অসন্তোষ আছে শিক্ষার্থীদের দিক থেকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবাসন সুবিধা না থাকায় অতিরিক্ত খরচ করেও বাধ্য হয়ে বিকল্প আবাসন যোগাড় করতে হয় তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে আবাসন সুবিধা থাকলে পড়াশোনা পরিবেশ পাওয়ার পাশাপাশি গণপরিবহনের যানজট ভোগান্তি থেকেও নিস্তার পেতো শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বলছেন, পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় তাদের নানামুখী অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন ছাত্রীরা।
আইআইইউসি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিজস্ব সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে ও বিদেশে সুনাম আছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি)। চট্টগ্রামে কার্যক্রম পরিচালনা করা দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম আইআইইউসি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনুষদে দেশী-বিদেশী ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী একই সময়ে পড়াশোনা করতে পারে।
যুগের চাহিদা ও শিক্ষা-গবেষণা খাতে অবদান রাখতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় ও কারিকুলাম চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৫টি সুবিশাল ছাত্রাবাসের মাধ্যমে আবাসিক সুবিধা দেয় আইআইইউসি। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও সুদান থেকে আসা কয়েকশ বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আবাসিক সুবিধা আছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০২১ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পূর্বের ট্রাস্টি বোর্ডের পরিবর্তন করে নতুন ট্রাস্টি অনুমোদন দেয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে হলগুলো। তবে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত ছাত্রী নিবাসটি খোলা রয়েছে। ট্রাস্টি পরিবর্তনের কারণে কবে নাগাদ হল খোলা হতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেন তিনি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি
ঢাকার আশুলিয়ায় ১৫০ একর জায়গায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ন আবাসিক সুবিধা দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট হল ৯ টি আবাসিক হল আছে।যারমধ্যে ছেলেদের হল ৪ টি এবং মেয়েদের জন্য আছে ৫টি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টুডেন্ট এফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের মোট ৯টি আবাসিক হলে সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য পৃথক আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোটামুটি প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা ব্যয়ে শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে উচ্চগতির ইন্টারনেট, পরিশোধিত পানি, সুসজ্জিত রুম এবং অন্যান্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক থাকে একটি আবাসিক সেমিস্টার। ঢাকার সাভারে ৩০ একরের একটি আবাসিক ক্যাম্পাস আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। 'টার্ক' নামের ত্রৈমাসিক এ সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ক্যাম্পাসে থেকে পড়াশোনা করতে পারায় শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এধরণের আবাসিকতা।যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনের পাশাপাশি, ডাইনিং, লাইব্রেরি, সেমিনার হল, চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের আবাসনে রাজধানীর সাতারকুল, নিকুঞ্জে ৮টি আবাসিক হলের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
রাজধানীর ইউনাইটেড সিটিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৩ সালে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল রয়েছে। যেখানে আবাসিক সুবিধা পায় ৪০০ ছাত্রী। এছাড়াও ৫ হাজার শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
ঢাকার আশুলিয়াতে ১৫ একরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সব সুযোগসুবিধা দিতে ক্যাম্পাসেই আবাসিক হল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি হলে শতাধিক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা দেয়া হয়।