২৯ জুলাই ২০২৩, ২০:১৫

বাংলাদেশেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায় ইউসিএসআই

ইউনিভার্সিটি কলেজ সেদায়া ইন্টারন্যাশনাল-এর গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায় মালয়েশিয়ার প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় ইউনিভার্সিটি কলেজ সেদায়া ইন্টারন্যাশনাল (ইউসিএসআই)। সে লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে স্থাপিত ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু করেছে গত মে মাস থেকে। এর আগে গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে তাদের প্রথম শাখা ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি পায় ইউসিএসআই। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা থেকে অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বিশ্বের শীর্ষ ৩০০ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সেরা ১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও ধরে রেখেছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ। একই সাথে ইউসিএসআই এশিয়ায় ৭২তম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংয়ে ১৬তম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ইউসিএসআই প্রতিষ্ঠার গল্প
১৯৮৬ সালে ইউসিএসআই মালয়েশিয়ার একটি কম্পিউটার-প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হয় ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের আরও বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে কাজ শুরু করে। ১৯৯০ সালের দিকে মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউসিএসআইকে কলেজ, ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং তার পরবর্তী পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা প্রদান করে। ২০০৮ সালে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাওয়ার পর দেশটির দ্বিতীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় পূর্বে সেদায়া নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটি।

সুযোগ-সুবিধা ও স্কলারশিপ
ইউনিভার্সিটি কলেজ সেদায়া ইন্টারন্যাশনাল (ইউসিএসআই) ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি বিগত বছরের শেষের দিকে পেলেও প্রতিষ্ঠানটি দেশে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে চলতি বছরের প্রায় মাঝামাঝিতে। আধুনিক, মানসম্মত ও গবেষণা নির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে ২টি স্নাতকোত্তর ও ২২টি স্নাতক প্রোগামে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রোগামে শিক্ষার্থীরা তাদের ভর্তির পর যেকোনো সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির মেইন ক্যাম্পাসে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারবে। মালয়েশিয়া ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ পাবেন আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মেধা ও ফলাফলের ভিত্তিতে স্কলারশিপেও সুবিধাও থাকছে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে।

‘‘এখানে যে প্রোগ্রামগুললো অফার করছি; তা মালয়েশিয়ার মতোই। তাই কেউ যদি তার কোর্সের দুই বছর এখানে এবং অবশিষ্ট দুই বছর মালয়েশিয়ায় করতে চায়; তারা সেখানে গিয়ে তা সম্পন্ন করতে পারে। এই সিদ্ধান্ত এখানকার শিক্ষার্থীরা নিতে পারবে’’— চ্যান জো জিম, প্রভোস্ট, ইউসিএসআই বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস

বাংলাদেশে পথচলা
২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি ও ৬ ডিসেম্বর তারিখের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ ডিসেম্বর এক স্মারকের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি-এর বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য সাময়িক অনুমতি প্রদান করেন। ফলে বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিক পথচলার অনুমতি পায় কিউএস র‌্যাঙ্কিয়ে থাকা বিশ্বের ২৮৪তম বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এরপর গত ১২ ডিসেম্বর ২০২২ এক স্মারকের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ক্ষমতাবলে প্রণীত বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪ এর বিধি ৭ ও ৯-এ বর্ণিত শর্তসমূহ প্রতিপালন সাপেক্ষে ৫(৪) ও ৫(৫)-এর উপবিধি অনুযায়ী ৭ বছরের জন্য ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি-এর বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার সাময়িক অনুমতি প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে ইউজিসি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ক্যাম্পাস সরেজমিনে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করে গত ৩০ মার্চ।

নর্থ সাউথের কাছাকাছি টিউশন ফি’তে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিং’য়ে প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পারে, এটা বড় ব্যাপার। সুতরাং এটা বিবেচনায় আনতে হবে—  অধ্যাপক ড. গোলাম আহমেদ ফারুকী, ডিন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ

ইউসিএসআই ক্যাম্পাসটি মালয়েশিয়ার কোয়ালিফিকেশন এজেন্সি দ্বারা স্বীকৃত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে মালয়েশিয়ান কারিকুলামের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে মোট ২৪টি প্রোগ্রাম অফার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২১ টি স্নাতক এবং ৩ টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম পর্যায়ের। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ইউসিএসআইয়ের প্রোগ্রামগুলোই বর্তমানে সারাবিশ্বে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম আহমেদ ফারুকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী কোর্স সাজানো হয়েছে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক জ্ঞান প্রায়োগিক কাজে লাগিয়ে কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে। আমরা শিক্ষার্থীদের শেখানোর সময় বাস্তবিক এবং প্রায়োগিক দিকগুলোই দেখে থাকি। এতে শিক্ষার্থীরা বাস্তবমুখী এবং কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে। অধ্যাপক ফারুকীর ভাষ্য, ইতিহাস সাক্ষী দেবে, ইউসিএসআই বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা প্রথমবারের মত এমন একটা জিনিস এনেছে; যেটা এই দেশের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় শিক্ষার এই প্রফেসর বলেন, নর্থ সাউথের কাছাকাছি টিউশন ফি’তে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিং’য়ে প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পারে, এটা বড় ব্যাপার। সুতরাং এটাও বিবেচনায় আনতে হবে।

যা বললেন প্রভোস্ট চ্যান জো জিম 
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ শাখার প্রভোস্ট চ্যান জো জিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এখানে সর্বোচ্চ মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছি। ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসকে নিয়েই আমাদের ভালো অবস্থান ধরে রাখতে হবে। সেজন্য আমরা শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা ও বাস্তবমূখী শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছি। ফলে, এখানকার শিক্ষার্থীরা আরও বেশি জীবনমুখী হতে পারছে এবং বাস্তব জীবনে বা কর্মক্ষেত্রে খুব সহজে প্রবেশ করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল ক্যাম্পাসে মোট ১৫৬টি প্রোগ্রাম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ের চাহিদার ওপর নির্ভর করে এখানেও প্রোগ্রামের সংখ্যা বৃদ্ধি করবো। শুরুতে গ্রীষ্মকালীন সেশনে মূল ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং ফল সেশনের ভর্তি কার্যক্রমের দিকে যাচ্ছি। আমরা এখানে সবগুলো প্রোগ্রাম চালু করতে চাই; তবে এজন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। কারণ, কোনো ক্লাসে হয়ত একজন আবার কোনো ক্লাসে ৫ জন শিক্ষার্থী থাকতেই পারে; কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মদক্ষতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে এই সংখ্যা ১০ বা তার বেশি হওয়া উচিত। এ কারণেই আমরা এখন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও তাদের পছন্দের শীর্ষে থাকা প্রোগ্রামগুলো পর্যালোচনা করছি।

চ্যান জো জিম আরো বলেন, আমরা এখানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাজের দিচ্ছি; যাতে এটি বিশ্বর‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকতে পারে। আর মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ দুটিই মুসলিম দেশ। তাই দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ে পারস্পরিক সম্মান রয়েছে। এ কারণে তারা এখানে পড়ুক কিংবা সেখানে (মালয়েশিয়ায়) প্রায় একই। শুধু ভিসা এবং আর্থিক কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে।
আমাদের এখানে যে প্রোগ্রামগুলো অফার করছি; তা মালয়েশিয়ার মতোই। তাই কেউ যদি তার কোর্সের দুই বছর এখানে এবং অবশিষ্ট দুই বছর মালয়েশিয়ায় করতে চায়; তারা সেখানে গিয়ে তা সম্পন্ন করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো তারা কী চাচ্ছে? তারা কি স্নাতক এখানে সম্পন্ন করবে নাকি মালয়েশিয়ায় গিয়ে  সম্পন্ন করবে। এই সিদ্ধান্তও তারা নিতে পারবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক শাখা ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়ালালামপুর মূল ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানের ৩ ফেব্রুয়ারি দেশটির উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ খালেদ নরডিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই শাখা ক্যাম্পাস চালুর ঘোষণা দেন। এরপর গত ১ মার্চ রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসটি বনানীতে স্থাপন করা হয়েছে। গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।