১১ জুলাই ২০২৩, ১৬:০৮

অনুমোদন ছাড়া ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দায় নেবে না ইউজিসি

ইউসিএসআই’র বাংলাদেশ ক্যাম্পাস ও ইউজিসি লোগো  © ফাইল ফটো

অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন না নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এবং রেজিস্ট্রেশন না থাকাসহ শুরুতেই একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মালয়েশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি’র বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দায় নেবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। 

জানা গেছে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দেশে প্রথম বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাখা ক্যাম্পাস খোলার অনুমোদন লাভ করে ইউসিএসআই। চলতি বছরের মে মাসে ঘটা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করা হয়। ক্যাম্পাস উদ্বোধন হলেও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ কোনো কিছুরই অনুমোদন নেয়নি বিশ্ববিদ্যায়লটি। অনুমোদন না নিয়েই শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপন দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ইউসিএসআই থেকে পড়ালেখা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সমতাকরণ করতে হবে। এটি ইউজিসির মাধ্যমে করাতে হবে। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমসহ অন্যান্য বিষয়ের অনুমোদনের পূর্বে কেউ ভর্তি হলে তার সার্টিফিকেট সমতাকরণ করা হবে না-ইউজিসি

ইউজিসি বলছে, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদনের পর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা, বিওটি, শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়গুলো পৃথক পৃথকভাবে অনুমোদন নিতে হয়। তবে এর কোনোটিই করেনি ইউসিএসআই; যা আইনের লঙ্ঘন। এগুলো অনুমোদনের পূর্বে কোনো শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হলে তার দায়ভার নেবে না ইউজিসি।

ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ইউসিএসআই থেকে পড়ালেখা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সমতাকরণ করতে হবে। এটি ইউজিসির মাধ্যমে করাতে হবে। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমসহ অন্যান্য বিষয়ের অনুমোদনের পূর্বে কেউ ভর্তি হলে তার সার্টিফিকেট সমতাকরণ করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউসিএসআই এ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিদেশি এ বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটিসহ বেশ কিছু বিষয়ে ইউজিসির অনুমোদন লাগবে। এগুলো অনুমোদনের পূর্বে শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তাদের সার্টিফিকেট সমতাকরণ করা হবে না।

জানা গেছে, অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ইউসিএসআইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় ইউজিসি। নোটিশের জবাবও দিয়েছে ইউসিএসআই। তবে সেই জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইউজিসি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। গত ৩ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছিল ইউজিসি।

আমরা চাই না কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হোক। ইউসিএসআই যদি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে তারা ইউজিসির কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবে। তবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন লঙ্ঘন করে কেউ কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর--অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ইউজিসি

ইউজিসির দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪-এর বিধি ৪(১), ৪ (৬), ৭(৫) ও (ঞ), ১১(১) (গ), ১২(২) এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ধারা এবং উপধারাসমূহের ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাস কর্তৃক ব্যত্যয় ঘটেছে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জারিকৃত পত্রের শর্তসমূহও প্রতিপালন করা হয়নি। 

শোকজের জবাবে ইউসিএসআই জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস বাংলাদেশে পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত বছরের জন্য ক্যাম্পাসটিকে সাময়িক অনুমতি প্রদান করে।

এরপর ইউজিসি প্রস্তাবিত ক্যাম্পাস সরেজমিন পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হয়ে এ বছরের ৩০ মার্চ তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এরপরই তারা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে।

ইউসিএসআই’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমরা চাই না কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হোক। ইউসিএসআই যদি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে তারা ইউজিসির কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবে। তবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন লঙ্ঘন করে কেউ কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর।

ইউসিএসআই’র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাখা ক্যাম্পাসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফুল বারির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘‘এই মুহুর্তে আমি দেশের বাইরে রয়েছি। আগামী ১৪ জুলাই ঢাকায় ফিরবো। তখন এ বিষয়ে কথা বলব’’।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইউসিএসআই’র প্রভোস্ট, ডিন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার সবাই মালয়েশিয়ান। তারা ঈদের ছুটিতে মালয়েশিয়াতে আছে। আগামী ১৫ জুলাই দেশে ফিরবেন। এরপর তাদের সাথে কথা বলা যাবে।