আইন বিভাগের আসন নিয়ে গ্যাঁড়াকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত ও যেনতেনভাবে কোর্স শেষ করিয়ে দেয়ার প্রবণতা কমাতে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে শক্ত অবস্থানও নেয় কমিশন। পরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা-কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা সাপেক্ষে আসন সংখ্যা সমন্বয় করে মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু বিপত্তি বাধে আইন বিভাগ নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই এক রায়ে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বছরের সনদ নিয়ে জটিলতার প্রেক্ষিতে এলএলবি কোর্স সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। জটিলতার উৎপত্তিস্থল দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির দু’বছর মেয়াদি এলএলবি কোর্স থেকে। ২০০৭ সালে এ ধরনের এলএলবি কোর্স চালুর জন্য ইউজিসিতে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
কিন্তু সে সময় অনুমোদন না পেলেও কোর্স চালু করে ফেলে দারুল ইহসান কর্তৃপক্ষ। পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন বিভাগের শিক্ষা ও আসন সংখ্যা নির্ধারণে বার কাউন্সিলের অনুমোদনের শর্ত যুক্ত করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা টিউশন ফি'র টাকা দিয়েই চলে। কিন্তু ডুয়াল সেমিস্টারের কারণে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এর ওপর আইন বিভাগে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া আমাদের জন্য বাড়তি চাপ--উপাচার্য, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি
ডুয়াল সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এলএলবি প্রোগ্রামে বছরে তিন সেমিস্টারে মোট ১৫০ জন (সর্বোচ্চ ৫০ জন করে) শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারত। এখন সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডুয়াল সেমিস্টার বাধ্যতামূলক হলে, প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছে। এতে শিক্ষার্থী সংকটে আর্থিকভাবে চাপের মুখে পড়ার কথা বলছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার কারণে দূরত্ব ও যাতায়াত ভোগান্তি বাড়ায় শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আইনে শিক্ষার্থী কমা সত্ত্বেও শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন তারা। ফলে আর্থিকভাবে চাপের মুখে আছে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এ বিষয়ে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা টিউশন ফি'র টাকা দিয়েই চলে। কিন্তু ডুয়াল সেমিস্টারের কারণে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এর ওপর আইন বিভাগে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া আমাদের জন্য বাড়তি চাপ।
তার প্রস্তাব, ৭৫ জন করে দুই সেমিস্টারে ১৫০ জন শিক্ষার্থী হলে এ সমস্যা থাকে না। আবার স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার কারণেও শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে একটু চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। উপাচার্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি সুরাহা হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: সমাবর্তনে আটকা বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন
এর আগে বছরের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে আসন সংখ্যা আগের মতো ১৫০ জন রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে বার কাউন্সিলকে চিঠি পাঠায় ইউজিসি। সে সময় এ বিভাগের আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ করার অনুরোধ জানায় তারা। কিন্তু আদালতের রায়ের কথা বলে এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে বার। আদালত থেকে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ নেই জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগের আসন নির্ধারণে বার কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছিলাম। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই--ওমর ফারুক, পরিচালক ইউজিসি
এদিকে আইন বিভাগের আসন সংখ্যা সংক্রান্ত রায় রিভিউ করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মাসখানেক আগে মামলাটি আপিল বিভাগে নথিভুক্ত করে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন।
বার কাউন্সিলের সাথে আসন নির্ধারনে সৃষ্ট জটিলতা প্রসঙ্গে ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘বার কাউন্সলের পরীক্ষায় কতজনকে আইনজীবী সনদ দেবে সেটা তারা চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দরকার হয় চাহিদা না থাকলে ৫ বছর কোনো নতুন আইনজীবী সনদ দিল না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আইন পড়া তো থামিয়ে রাখা যাবে না। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়ে কতজন আইনজীবী হয়?’ প্রশ্ন তার।
তিনি আরও বলন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আইন পড়ে আইনজীবী হয় না। বিস্তৃত ক্ষেত্র আছে তাদের কাজ করার। এখানে বার কাউন্সিলের এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে আসন নির্ধারণের কথা বলছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু মিয়া আকন্দ তুহিন বলছেন, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা এক নয়। সবার জন্যই যদি একটা সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে এর যথার্থতা ঠিক থাকে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষক, ক্লাসরুম ও অন্যান্য সক্ষমতা দেখে আসন নির্ধারণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি'র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুখ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগের আসন নির্ধারণে বার কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছিলাম। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করার বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।