২২ মে ২০২৩, ১৮:১৪

মূল সনদ না পেয়ে বিপাকে নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ছবি

২০২১ সালের ৮ এপ্রিল সর্বশেষ সমাবর্তন আয়োজন করেছিল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলে আর কোন সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মূল সনদ পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ব্যাচের গ্র্যাজুয়েটরা। এর ফলে এসব শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারছেন না। এমনকি অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ স্কলারশিপ পেলেও মূল সার্টিফিকেটের অভাবে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারছেন না।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বারবার অবগত করার পর কোন সমাধান না পেয়ে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর একটি আবেদন করেছেন। সেখানে তারা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন।

এসব শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তির ক্ষেত্রেই মূল সনদ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদ দিচ্ছে না নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ইউজিসি বরাবর একটি লিখিত আবেদনও করেছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে মো: নাইমুর রহমান ওই আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন, তারা অনেকেই দক্ষিণ কোরিয়াতে ১০০% বৃত্তিসহ মাস্টার্স এবং মাস্টার্স-পিএইচডি সমন্বিত প্রোগ্রামে এবং জার্মানি ও ডেনমার্কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু ২৪তম এবং ২৫তম সমাবর্তন না হওয়ার কারণে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্নাতক/ স্নাতকোত্তর পাশের মূল সনদ প্রদর্শন না করতে পারার প্রেক্ষিতে দূতাবাস তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং ভিসা প্রাপ্তির জন্য মূল সনদ সংগ্রহ করে দূতাবাসে জমা দিতে বলেন। এছাড়াও জার্মানি ও ডেনমার্কে অধ্যয়নরত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের তোদের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল সনদ জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে অন্যথায় উপরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি বাতিল করবে।

আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তন ব্যতীত মূল সনদ প্রদান করতে চাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ৩০ ধারার ২ উপধারায় উল্লেখিত ‘চ্যান্সেলর বা তাহার মনোনীত কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ডিগ্রি ও সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করিবেন।’- বিধানটি উল্লেখ করে মূল সনদ প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করে আসছে।

আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অতি দ্রুত ২৪তম এবং ২৫তম সমাবর্তন আয়োজনের অনুমতি প্রদানের জন্য অথবা উচ্চশিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনাপূর্বক ২৫তম সমাবর্তনের জন্য নিবন্ধিত উল্লেখিত ছাত্রছাত্রীদেরকে ২৪তম সমাবর্তনে তালিকাভূক্তি পূর্বক অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদানের অথবা যেকোনো উপায়ে জরুরিভাবে মূল সনদ প্রদান করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমতি প্রদানের অনুরোধ জানান।

জানা যায়, ২৪তম সমাবর্তন আয়োজনের অনুমতি চেয়ে ২০২১ সালের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। পরের মাসে ইউজিসি মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায়।

এরপর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সমাবর্তনের অনুমতি না পাওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে সমাবর্তন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে পুনরায় চিঠি দেয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এরপর পুনরায় ইউজিসির মতামত চেয়ে চিঠি মন্ত্রণালয়ের। গত মার্চে মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠিয়েছে ইউজিসি। যদিও এ প্রক্রিয়ায় একাধিক বার চিঠি চালাচালি হলেও এখন পর্যন্ত সমাবর্তনের অনুমতি পায়নি এনএসইউ। 

এ বিষয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. আহমেদ তাজনীম বলেন, সমাবর্তনের জন্য আমরা অনেক আগেই আবেদন করেছি। অনুমতির বিষয়টাতো আমাদের ওপর নির্ভর করছে না। আর আমরা সমাবর্তন ছাড়া মূল সনদ দিতে পারবো কিনা এ বিষয়ে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইউজিসিতে কথা বলছি।

এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মোঃ ওমর ফারুক বলেন, এ বিষয়ে আমরা আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি পরবর্তী সভায় আলোচনা হবে।