স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউজিসির নজরদারিতে আসছে ২০ কর্মকাণ্ড
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড; অনুমোদিত প্রোগ্রামসহ অন্তত ২০টি কর্মকাণ্ড নজরদারি ও তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যারে সংস্থাটি এ কার্যক্রম চালাবে। সফটওয়্যার চালু হলে একাডেমিক দিকে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই সফটওয়্যার কার্যকর হলে সনদ-বাণিজ্য বন্ধ হবে। কেননা, তখন শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে শুরু করে সেমিস্টার অনুযায়ী ফলসহ সবকিছু নজরদারির মধ্যে আসবে। এতে চাইলেও কারও পক্ষে অনৈতিক উপায়ে সনদ দেওয়া সম্ভব হবে না।
২০টি কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড; অনুমোদিত প্রোগ্রাম, সেগুলোর শিক্ষাক্রমের মেয়াদ ট্র্যাক এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের জন্য রিমাইন্ডার প্রদান; প্রোগ্রামে অনুমোদিত আসনসংখ্যার ভিত্তিতে ভর্তি নিশ্চিত; ভর্তি ও পাশ করা শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণ; সব দলিলাদি ইলেকট্রনিক ফর্মে সংরক্ষণ ও আদান-প্রদান।
আরও আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের মেয়াদ ট্র্যাক ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিমাইন্ডার প্রদান; বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সার্টিফিকেট অনলাইনে ভেরিফিকেশন; ডিজিটাল একাডেমিক সার্টিফিকেট প্রবর্তন; বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডকুমেন্ট ডিজিটালি সংরক্ষণ। আয়-ব্যয়ের তথ্য অডিট করে সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জমা দেওয়ার কথা। এ বিষয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকায় সফটওয়্যারে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপনের ব্যবস্থা থাকবে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বন্ধে আসছে নজরদারি প্রযুক্তি
আরও পড়ুন: ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন চলছে, পরীক্ষা ১৯ মে
এছাড়া থাকবে গবেষণাসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ; বার্ষিক প্রতিবেদন এবং অডিট প্রতিবেদন সংরক্ষণ এবং ট্র্যাক; সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সভার কার্যবিবরণী আপলোড ও সংরক্ষণ। সফটওয়্যারে সব শিক্ষকের প্রোফাইল সংরক্ষণ করা হবে। খণ্ডকালীন শিক্ষকের ছাড়পত্র সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নথিপত্রের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন; কমিশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ডকুমেন্ট আদান-প্রদান এবং বিভিন্ন মামলা ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা থাকবে।
বর্তমানে দেশে ১১১টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমতি দেওয়া হলেও মূলত চালু আছে ১০৭টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫ লাখ উচ্চশিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পৌনে ৬ লাখ।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং এতদসংক্রান্ত চাহিদা পূরণে ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষার যুগ শুরু হয়। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগামহীন সনদ বাণিজ্য, পদে পদে আইন লঙ্ঘন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এবার এসব অনিয়মে লাঘাম টানতে চায় কর্তৃপক্ষ।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেন, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। বর্তমানে দেশে ১১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্তু ইউজিসির জনবলের অভাবে সব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় সময়ে পরিদর্শন বা তদন্ত করা সম্ভব হয় না।
ওমর ফারুখ আরও জানান, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং মানসম্মত ও প্রশ্নাতীত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই সফটওয়্যার ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হবে।