ক্রিকেটার হাসান মাহমুদকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাড়াকাড়ি
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার হাসান মাহমুদকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে ‘ভালো খেলার জন্য’ শুভেচ্ছা জানিয়েছে দুইটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শুভেচ্ছা বার্তায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় তেমন কিছু না লিখলেও অপর বিশ্ববিদ্যালয় হাসান মাহমুদের আজকের (২৩ মার্চ) করা পার্পমেন্সের বিবরণ তুলে ধরেছেন। এদিকে, একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে নেটিনেজদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নেন পেসার হাসান মাহমুদ। তার তোপে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারী আয়ারল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটাই হাসান মাহমুদের প্রথম ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড।
এদিন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টাইগার পেসারদের তোপে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি আয়ারল্যান্ডের। সফরকারী শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন হাসান মাহমুদ। তার তৃতীয় ওভারে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্টেফেন দোহেনি। হাসানের ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ৮ রানে আউট হন স্টেফেন। দোহেনি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে।
পরের উইকেট শিকারিও হাসান। দলীয় অষ্টম ওভারের শুরুতেই তিনি নেন পল স্টার্লিংয়ের উইকেট। ফুল লেংথের এক ডেলিভারিতে বল পায়ে লাগার পর স্টার্লিং রিভিউয়ের আবেদনই করেননি, ফিরে যান প্যাভিলিয়নের পথে। আইরিশ ওপেনার ১২ বলে করেন ৭ রান। একই ওভারে হাসান শূন্য রানে হ্যারি টেক্টরকেও তুলে নেন।
এদিকে, হাসান মাহমুদের এমন অর্জনে শুভেচ্ছায় ভাসছেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। সবার সঙ্গে হাসান মাহমুদকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে একসঙ্গে শুভেচ্ছা জানিয়েছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে দেশের দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাড়াকাড়ি খুব একটা ভালোভাবে নেননি নেটিজেনরা। তাদের অনেকে জানতে চেয়েছেন, আসলে হাসান মাহমুদ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী? নাকি তিনি একসঙ্গে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালাচ্ছেন! এ বিষয়ে জানতে হাসান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে তথ্য বলছে, ২০২২ সালের অনুষ্ঠিত ক্লেমন ইনডোর টুর্নামেন্টে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির হয়েই ক্রিকেট খেলেছেন হাসান মাহমুদ। সে টুর্নামন্টের সেমিফাইনালে গ্রিন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ৩ উইকেটের জয়ের ম্যাচে সাউথইস্টের জার্সি পরে খেলতে দেখা গেছে তাকে।
আরও পড়ুন: হাসান-তাসকিনের তোপে ১০১ রানে গুটিয়ে গেল আয়ারল্যান্ড
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বৈত-ভর্তি ৯৫৪ শিক্ষার্থী, বাতিল করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি হাসান মাহমুদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছে, ‘‘সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিপার্টমেন্টের মেধাবী শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ১০১ রানে অলআউট আয়ারল্যান্ড। হাসান মাহমুদ ৩২ রান দিয়ে একাই তুলে নেন ৫ উইকেট। সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে হাসান মাহমুদকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’’
শুভেচ্ছা বার্তায় তেমন কিছু না লিখলেও হাসান মাহমুদের একটি ছবি শেয়ার করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি নিজেদের ফেসবুকে লিখেছে, ‘‘অভিনন্দন হাসান মাহমুদ। আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আপনাকে নিয়ে গর্বিত।’’
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক তারিক আল জালিল বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হাসান মাহমুদ আমাদের সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এখানে তার শিক্ষার্থী আইডিও রয়েছে। শুধু তিনি নন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় দলের আরও একাধিক জন খেলোয়াড় কোটায় পড়াশোনা করছেন।
আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসান মাহমুদকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবির বিষয়টি তারিক আল জালিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত হাসান মাহমুদ আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কারণ তিনি এখান থেকে ছাত্রত্ব বাতিলের কোনো আবেদন করেননি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া তিনি যদি আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে থাকেন, তাহলে তো সেটা আমাদের জানার কথা না।
হাসান মাহমুদকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির অ্যাডমিশন অফিসার রাসেল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘তিনি ২০২৩ সালের স্প্রিং সেমিস্টারে অনলাইনে ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ) এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করছেন।’
জানতে চাইলে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার এসএম নুরুল হুদা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চলতি সেশনে ভর্তির পর সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে হাসান মাহমুদের ক্লাস শুরু হয়েছে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি ছাড়া তিনি যদি আগে পরে কোথাও ভর্তি হয়ে থাকেন, সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।