০২ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৫

আমাদের শিক্ষাকে স্মার্ট করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  © টিডিসি ফটো

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের শিক্ষাকে স্মার্ট করতে হবে। আমরা এখন আর শিক্ষাকে পরিবর্তন আর সংস্করণ এর কথা বলছি না, এখন রুপান্তরের দিকে যাচ্ছি। মুখস্থ বিদ্যা বাদ দিয়ে আনন্দের মধ্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরীক্ষা ভীতি যেন না হয় সেজন্য তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা নেই। তৃতীয় শ্রেণী থেকে শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স শেখার প্রোগ্রাম, কোডিং শেখানো হবে। 

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।  

তিনি বলেন, অসুস্থতা হওয়া সত্যেও আজকে আমি এখানে এসে আনন্দিত। এ মাস আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ মাস, কারণ এই মাসেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে শুনিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতার শব্দ। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ধাপে ধাপে আমরা ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সব সময় সোনার বাংলার জন্য স্বাধীন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতেন। তবে তাকে স্বপরিবারে মেরে ফেলার পর তা হয়নি। তখন বিজ্ঞানও প্রযুক্তিতে দেশ অনেক পিছিয়ে যাচ্ছিল। 

এরই ধারাবাহিকতায় ২১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এখন দেখুন আজকের বাংলাদেশে একজন মানুষও না খেয়ে থাকে না, প্রতিটি মানুষের গায়ে কাপড় আছে, একজন মানুষও খালি পায়ে থাকে না। গৃহহীনকে বেছে বেছে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রত্যকটি শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।  

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ১০টি বৃত্তি দেবে মালয়েশিয়া

মন্ত্রী বলেন, মৌলিক চাহিদা পূরন করার পাশাপাশি, আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। সবার হাতে হাতে মোবাইল পৌঁছে গেছে। যা দিয়ে শুধু কথা বলাই না সবকিছু-ই করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই পদ্মা সেতু, কর্নফুলি টার্নেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট এর কাজের সুবিধা পাওয়া আমরা শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশকে কেন্দ্রীয় ভাবে উন্নয়নের জন্য স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি হিসেবে গড়তে চান। 

তিনি বলেন, আমরা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি এবং সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। অনেক রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। বার বার রক্ত দিয়ে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। কাজেই আমরা পারব সকলে মিলে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়তে এবং আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। পোশাক শিল্পে ১০ বছর আগে রানা প্লাজার দূর্ঘটনার পর সারা বিশ্ব মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করলেও বর্তমানে সারা পৃথিবীর তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থানে আমরা শুধু দ্বিতীয়-ই নয় বরং বিশ্বের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সবই আমাদের। 

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তনের এক পর্যায়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পযার্য়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, সিজিপিএ-৪ পাওয়া কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সামিয়া বিনতে হাসান, সিজিপিএ-৩.৯৯ পাওয়া কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক ডিগ্রিধারী সুমনা ইয়াছমিন ও সিজিপিএ-৩.৯৯ পাওয়া ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের স্নাতক ডিগ্রিধারী ফারহানা হক মাহি। 

এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন যেখানেই যাই সেখানেই মেয়েরা স্বর্ণপদক পায়, ছেলেরাও পরছে তবে তাদের মন হয়তো একটু অন্য দিকে। তাই তারা বেশি পাচ্ছে না। এসময় সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে।  শর্টকাটে কখনও সফলতা আসে না, তাই কেউ দয়া করে শর্টকাট খুঁজবেন না।  

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম.এম শহীদুল হাসান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারর্সন সৈয়দ মনজুর এলাহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত লেখক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ ( সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান।

অন্যদের মধ্যে সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সদস্যবৃন্দ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক মামুন, কোষাধ্যক্ষ, আমন্ত্রণিত অতিথিবৃন্দ, তিন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, একাডেমিক কাউন্সিলরের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, সমাবর্তন নেওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ।