অধ্যাপক ছাড়াই চলছে চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

  © প্রতীকী ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রয়েছে এমন অন্তত চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো স্থায়ী অধ্যাপক নেই। এছাড়া, ১১টিতে চলছে মাত্র একজন করে অধ্যাপক দিয়ে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

স্থায়ী অধ্যাপক ছাড়াই চলমান চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- জেড. এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আর্মি ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা। 

এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম বলে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে জেড. এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন স্থায়ী সহযোগী অধ্যাপক, ৫ জন স্থায়ী সহকারী অধ্যাপক, ৪৭ জন স্থায়ী প্রভাষক, একজন অস্থায়ী প্রভাষক এবং একজন অস্থায়ী অধ্যাপক দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটিতে খন্ডকালীন ৭ অধ্যাপকের সঙ্গে পাঠদান করছেন একজন স্থায়ী সহযোগী অধ্যাপক, ৪ জন স্থায়ী সহকারী অধ্যাপক, ২৩ জন স্থায়ী প্রভাষক, একজন অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক ও ১৬ জন অস্থায়ী প্রভাষক।

গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশে স্থায়ী অথবা খণ্ডকালীন কোনো ধরনের অধ্যাপক নেই। এমনকি সেখানে স্থায়ী বা অস্থায়ী সহযোগী অধ্যাপকও নেই। ১৭ জন স্থায়ী প্রভাষক, ৯ জন অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক ও ৬ জন অস্থায়ী প্রভাষকের মাধ্যমেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ আর্মি ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতেও স্থায়ী অধ্যাপক নেই। ৩ জন খন্ডকালীন অধ্যাপকসহ স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে মোট ১০২ জন শিক্ষক রয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র একজন করে স্থায়ী অধ্যাপক দিয়ে চলছে ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনির্ভাসিটি, দি পিপল’স ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ, ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ফেনী ইউনির্ভাসিটি, ব্রিটানিয়া ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইনঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি-কাদিরাবাদ, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি।

এছাড়া, মাত্র দুজন করে অধ্যাপক রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্টান ইউনিভার্সিটি-খুলনা, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও রনদা প্রসাদ সাহা ইউনিভার্সিটিতে।

স্থায়ী অধ্যাপক ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি বিস্ময়কর বলে জানান শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় মূল অনুষঙ্গ গবেষণা ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা। যে কাজগুলো সাধারণত অধ্যাপকরাই করে থাকেন। অথচ দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নেই, আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় চলছে এক-দুইজন অধ্যাপক দিয়ে। এই শূন্যতা উচ্চশিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনিতেই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে অধ্যাপকের সংখ্যা কম হওয়া উচ্চশিক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ। মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের জন্য মানসম্মত শিক্ষক জরুরি। এক্ষত্রে অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক যোগ্যতার অন্যতম ক্যাটাগরি। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারেরও নজর দেওয়া উচিত।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপকদের বেশি বেতন দিতে হয় এই কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী অধ্যাপক রাখতে চায় না। অথচ তারা শিক্ষার্থীদের থেকে উচ্চ টিউশন ফি গ্রহণ করে থাকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি অধ্যাপক তৈরি করতে চান না। কেননা অধ্যাপকদের বেতন অনেক বেশি। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে এই মানসিকতা পরিহার করা উচিৎ।


সর্বশেষ সংবাদ