স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটুকু প্রস্তুত?
স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরিত করার জন্য গত এপ্রিল মাসে দেশের ২৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানান্তরিত না হলে এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির এমন কঠোর সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকগুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে, বাকিরা স্থানান্তরিত হতে আরও সময় নিতে চায়। এজন্য তারা ইউজিসির সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগও করেছে। তবে ইউজিসি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় দিতে চায় না। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে দুই/তিন মাস সময় লাগবে কেবল তাদের ক্ষেত্রেই সময় বাড়ানো হতে পারে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে পূর্বের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউজিসির চিঠি পাওয়ার পরও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) তাদের পুরো শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করেনি। তারা কেবল তাদের একাডেমিক কার্যক্রম মোহাম্মদপুরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালনা করছে। ধানমন্ডির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম এখনো চালু রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। রাজধানীর মহাখালীতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ অস্থায়ী ক্যাম্পাস কলাবাগানে এখনো ভর্তি ও একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস পূর্বাচলে হলেও তাদের বর্তমান কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে আগারগাঁওয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও প্রায় একই। ফলে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আরও পড়ুন: স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে ছাড় নয়: ইউজিসি
চিঠি পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস বর্তমানে নির্মাণাধীন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে তারা স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এছাড়া হঠাৎ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী খড়ায় পড়বে। তাই তারা এখনই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চান না।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রেজারার ড. মো. হাসান কাওসার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা নিয়মিত ইউজিসির সাথে যোগাযোগ রাখছি। কমিশনের সাথে আমাদের নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তবে সম্ভবত সেটা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে পূর্বাচলের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা সম্ভব হবে না।
এদিকে ইউজিসির চিঠি পাওয়ার কথা অস্বীকার করে ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়েছি। ক্লাসগুলো সেখানেই পরিচালিত হচ্ছে। ইউজিসির সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, তারা আমাদের এ ধরণের কোনো চিঠি দেয়নি।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানান্তরিত না হলে ইউজিসির পদক্ষেপ কি হবে তা জানতে চাওয়া হলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর না করে তাহলে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে না সেগুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এছাড়া কোর্সগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়কে রেডমার্ক করা হবে। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষের দিকে তাদের যদি প্রয়োজন হয় তাহলে দুই এক মাস সময় দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৭(২) ধারা অনুযায়ী, অনুমোদন পাওয়ার পর সাত বছর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন করে সময় বাড়াতে পারবে। এই সময় পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। তবে ১২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি।