প্রাথমিকে গান শেখানোর উদ্যোগ, আড়াই হাজার শিক্ষক পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে গান শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য সারাদেশে আড়াই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হবে সমপরিমাণ। প্রতি বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জনবলের বিপরীতে বরাদ্দ নিশ্চিত করে সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে তা যাবে সচিব কমিটিতে। সেখান থেকে প্রাথমিকে আবার যখন সিদ্ধান্তটি আসবে, তখন তা পাঠানো হবে অধিদপ্তরে। তারপর আসবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। সব স্কুলে একজন করে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক যদি নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলেও নতুন চাকরির সুযোগ হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩২টি। সারাদেশে বর্তমানে কর্মরত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন।
সরকার চাইছে, শিশুরা স্কুলে এসে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটাবে। পড়াশোনাকে বিশেষ চাপ ভেবে ভীত থাকবে না। সনাতন ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতির বদলে প্রাথমিক থেকেই শিশুরা যেন আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে, সে জন্য পাঠক্রম থেকে শুরু করে স্কুলের অবকাঠামোও পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবে শিক্ষায় সংগীত ও শরীরচর্চা যোগ হচ্ছে।
বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিক থেকেই সংগীত শেখানোর ব্যবস্থা আছে। এই দায়িত্বে আছেন শুক্লা ধর। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে যখন আমরা ক্লাস নেই, তারা বেশ উপভোগ করে। যেসব পরিবার সংগীতচর্চায় আগ্রহী, সেসব পরিবার স্কুলের বাইরেও বিষয়টি এগিয়ে নেয়।’
শুক্লা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে। তার মতো যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের পক্ষে পেশা হিসেবে সংগীতকে বেছে নেয়াটা কঠিন হয়ে যায় এই কারণে যে খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে নিয়োগ দেয়া হয় না।
প্রাথমিকে বিষয়টি চালু হলে সংগীতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের শিক্ষাকে আনন্দময় করার দাবি করে আসছি। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে প্রাথমিকে অঙ্কন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়টি আরও জোরদার করা উচিত।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত প্রাথমিক শিক্ষায়। এই ধরনের উদ্যোগ এই শিক্ষার মান বাড়াবে।’
প্রাথমিক ও জনশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ৫ হাজার ১৬৬টি পদ তৈরি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি যদি স্কুলে স্কুলে চালু হয়, তাহলে কর্মসংস্থানের নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে।