রমজানজুড়ে ছুটি চাওয়ার স্বারকলিপিতে যে কারণ বলছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২২, ০৭:৫০ AM , আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২, ০৮:০৫ AM
আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান মাসজুড়ে ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এ দাবি আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দেশব্যাপী স্মারকলিপি দেবে বলে জানিয়েছে। ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তারা এ স্মারকলিপি দেবেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামসুদ্দিন মাসুদ স্মারকলিপির একটি খসড়া ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। ‘পবিত্র রমজান মাসের পূর্বনির্ধারিত ছুটি বহাল রাখার আবেদন প্রসঙ্গে’ বিষয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকগণ বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চৈত্র মাসের প্রচণ্ড গরমে রোজা রেখে ক্লাস নেয়া খুবই কষ্টসাধ্য হবে। ৮০ শতাংশ মহিলা শিক্ষক সেহরি প্রস্তুত করে সংসারে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে সারাদিন স্কুল শেষে আবার ইফতারের আগে সকল প্রস্তুতি, সংসার পরিচালনা খুবই কষ্টকর হবে।
আরো বলা হয়েছে, অনেক বছর ধরে শিক্ষক বদলি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষক নিজ বাসস্থান থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন। রমজান মাসে সকালবেলা গাড়ি, সিএনজি, রিকশা ইত্যাদি কম চলাচল করে। ফলে দূরবর্তী বিদ্যালয়গামী শিক্ষকগণকে যানবাহন পেতে খুবই সমস্যা হবে এবং সকাল বেলা রাস্তাঘাট নিরিবিলি থাকার ফলে শিক্ষকগণ ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হতে পারেন। রমজানে শিশুরা সাধারণত কোরআন শিক্ষায় ভর্তি হয়। তখন শিশুরা বিদ্যালয়ে না এসে কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রে চলে যায়।
আরো পড়ুন: পুরো রমজান মাস বন্ধ চান প্রাথমিকের শিক্ষকরা
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, করোনাকালীন বিদ্যালয় এবং সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ বন্ধ ছিল না। শিক্ষকগণ অনলাইনে পাঠদান করাছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্কশীট বিতরণ করেছেন। যেসব শিশুদের ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন নেই সেসব শিশুদের মোবাইলে ফোন কলের মাধ্যমে পাঠদান ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত না হলেও শিক্ষকগণকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। শিশুদের হোম ভিজিট করা হয়েছে।
দিনে রাতে সময়ে অসময়ে জুম মিটিং করতে হয়েছে জানিয়ে আরো বলা হয়েছে, শিশু ভর্তি, উপবৃত্তি, শিশু জরিপ, স্টুডেন্ট প্রোফাইল, ওয়ার্কশিট বিতরণ ইত্যাদি কাজ করোনার ঝুঁকির মধ্যেও ফেইস টু ফেইস বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষকগণ করেছেন। এসব কাজ ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
পবিত্র রমজান মাস ও চৈত্রের প্রচন্ড গরম, অনেক বছর থেকে শিক্ষক বদলি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষকের দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গমন এবং ৮০ শতাংশ নারী শিক্ষক ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়টি পুনঃর্বিবেচনার জন্য আবেদন করছেন বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা।
এতে পবিত্র রমজানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এসব সমস্যাবলী বিবেচনা করে পবিত্র রমজান মাসের পূর্বনির্ধারিত ছুটি বহাল রাখতে আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি।