আর কখনও খুলবে না ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন

কখনও খুলবে না ১৫ হাজার স্কুল
কখনও খুলবে না ১৫ হাজার স্কুল  © প্রতীকী ছবি

দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থেকে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ফের সচল হলেও আর কখনও দ্বার খুলবে না দেশের ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পরেছে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। এর কারণ, বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলে ভর্তির নিয়ম না থাকায় এ বছর অন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হতে পারবে না তারা।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্য মতে, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ সরকারি নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার আগে সারাদেশে ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন চালু ছিল। যেখানে পড়ালেখা করতো প্রায় ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী। আর শিক্ষক ও অন্যান্য স্টাফদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ।

কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর দেখা গেল প্রায় ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালুই করতে পারেনি। অন্যদিকে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন কোনভাবে চালু হলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে। যেখানে বন্ধের আগেও শিক্ষার্থীদের নূন্যমত উপস্থিতি ছিল ৯০ শতাংশ।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের হিসাব মতে সারাদেশে ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন পুনরায় চালু হতে পারেনি। এ বছর আর তাদের ক্লাসে ফেরা সম্ভব না। এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান আগামী বছর কোনমতে চালু হলেও হতে পারে। কিন্তু বাকী ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন আর কখনোই খুলবে না।

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী হারিয়ে এবং অর্থনৈতিক সংকটে পরে তারা এই অবস্থায় পড়েছেন বলে জানান তিনি।

ইকবাল বাহার জানান, স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। যার ফলে স্কুল খোলার পর আশঙ্কাজনকভাবে উপস্থিতি কমে গেছে।

অন্যদিকে দীর্ঘ সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছে। যার ফলে স্কুল চালু করা হলেও দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট। এর সাথে যোগ হয়েছে দীর্ঘদিনের শিক্ষকদের বেতন, বকেয়া ঘর ভাড়া এবং অন্যান্য বিল।

অর্থ সংকট, স্টুডেন্ট সংকট আর শিক্ষক সংকট – এতসব সংকট কাটিয়ে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন চালু হয়েছে। কিন্তু বাকি ২০ হাজার তো আর চালু হতে পারলো না, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন ইকবাল বাহার ‘কোন গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী এখন আর শিক্ষকতা করতে চান না’:

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেনের সাথে যুক্ত ১০ লাখ শিক্ষক ও স্টাফ অর্থ কষ্টের শিকার হয়েছে। অনেকেই বদলিয়েছেন পেশা। এখন নতুন করে প্রতিষ্ঠান খুললেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শিক্ষক।  

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে অর্থকষ্টে পড়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ তো দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজেও গেছেন। এখন আমরা শিক্ষক খুঁজলেও ভালো শিক্ষক পাচ্ছি না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুল চালু করতে পারলেও শিক্ষক সংকটের কারণে যথাযথভাবে পাঠদান চালানো যাচ্ছে না। এখন কোন গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীকে স্কুলে শিক্ষকতার জন্য অফার করলে সে রাজি হয় না। কারণ এই পেশায় তার চাকরির নিশ্চয়তা নেই।

কিন্ডারগার্টেন সেক্টরের এই সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি প্রণোদণা চান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ক্ষতির শিকার বেসরকারি স্কুলগুলোর জন্য সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা ঋণ সাহয্য চাইলেও তা পাওয়া যায়নি বলে জানান কিন্ডারগার্টেন মালিকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার বলেন, আমরা বার বার সরকারের কাছে চেয়েছি। উপজেলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস পর্যন্ত গিয়েছি। মানবন্ধন করেছি, অনশন করেছি। কিন্তু কেউই আমাদের নিয়ে ভাবেনি। সাহায্য তো দূরের কথা এক মুঠো চালও কেউ দেয়নি। সবাই নিরুৎসাহিত করেছে। এমন চললে শিক্ষকতা পেশায় আর কেউ আসতে চাইবে না।

সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমাদের প্রণোদনা দিয়ে কাজে ফেরার ব্যবস্থা করে দিন। শিক্ষকতা পেশাকে উৎসাহ দিন, বলেন তিনি।   

তবে সরকারের সাহায্য হয়তো সহসাই পাবেন না তারা। এমনই আভাস মিলল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের কথায়।

 এ বিষয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুলগুলোকে সাহয্য করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।


সর্বশেষ সংবাদ