তিন স্তরে ভাগ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, ঘাটতি পূরণে বিশেষ পরিকল্পনা
১৭ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মাঝে অনলাইন, টেলিভিশন আর অ্যাসাইনমেন্ট যোগে ক্লাস ও মূল্যায়ন চললেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শিক্ষার্থীরা ঠিকই পিছিয়ে গেছে, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কতটা? তা জানতেই স্কুলে যাওয়ার প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি নিরূপণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিষয়টি নিয়ে নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের তিন ভাগ করা হবে- মধ্যম মানের চেয়ে ভাল, মধ্যম, এবং মধ্যম মানের নিচে। এদের মধ্যে মধ্যম মানের নিচে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলবেন শিক্ষকরা। পাশাপাশি তাদের প্রতি দেবেন বিশেষ নজর।
এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ক্লাস হবে। ইতোমধ্যে ওয়ার্কশিটের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের প্রোফাইল চলে এসেছে। অন্যদিকে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা তো আগে থেকেই আছে। তাই এ সময়ে শুধুই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু কোনো পরীক্ষা হবে না। এর মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীর ঘাটতি সহজেই চিহ্নিত করতে পারবো।
জানা গেছে, প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে শিখন-ঘাটতি নিরূপণের এই পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ (আরএটি)। পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের সার্বিক ঘাটতি মূল্যায়ন ও পূরণের জন্য ‘অ্যাক্সিলারেটেড রিম্যাডিয়াল লার্নিং’ (এআরএল) নামে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ বছরে আর যে কটি কর্মদিবস অবশিষ্ট আছে সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে এই এআরএল পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রোববারের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা শিক্ষকদের কাছে পৌঁছানো হবে।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, বিগত দেড় বছর ক্লাস বন্ধ থাকলেও দুই বছরের ঘাটতি ধরেই সামনে আগানো হচ্ছে। কারণ, এ বছর যারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছে, তারা গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ছিল। ধরে নেওয়া হয়েছে, গত বছরও তাদের লেখাপড়া হয়নি। আবার এখন যারা প্রথম শ্রেণিতে আছে, তাদের তো এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক লেখাপড়াই হয়নি। এভাবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গত বছর দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকলেও গ্যাপ রয়ে গেছে দু’বছরেরই। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে এই ‘এআরএল’ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘটতি যাচাই করা হবে সাক্ষরতা পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে ভাষা ও গণিতের জ্ঞান অথবা বাংলা ও ইংরেজি বিষয় বেছে নেওয়া হবে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ঘাটতি দেখা হবে এ দুটি দিক দিয়ে। সাথে প্রধান বিষয়গুলোতে বাড়ির কাজও দেওয়া হবে। খোলার পরে প্রথম ২ সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষকরা এই টেস্ট করে ফেলবেন।
এছাড়া দীর্ঘদিন স্কুলে না আসায় যে মানসিক জড়তা তৈরি হয়েছে তা কাটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে অবস্থানটা আনন্দময় করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই গাইডলাইনে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি) নামে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য ৯ ভাগে ৬৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন বিকাল ৪টার মধ্যে মনিটরিং রিপোর্ট পাঠাতে বলেছে মাঠপ্রশাসনকে।