‘পুরো গ্রামে একটাই স্কুল, নদীতে চলে গেলে আমরা পড়ব কোথায়?’
রাজবাড়ী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সিলিমপুর গ্রামের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় 'চর সিলিমপুর'। এটি এখন দাঁড়িয়ে আছে পদ্মার ভাঙনের মুখে। পদ্মা নদী থেকে চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব এখন মাত্র কয়েক হাত। স্থানীয়দের আশঙ্কা, নদীর পানি আরেকটু কমলেই এটি বিলীন হয়ে যাবে।
চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. রাশেদ জানায়, স্কুলের পাশেই তার বাড়ি। কদিন ধরে সে বেশ চিন্তিত। তবে এই চিন্তা বাড়ি নিয়ে নয়, তার স্কুল নিয়ে। তার প্রশ্ন, ‘স্কুল নদীতে চলে গেলে আমরা পড়ব কোথায়?’
এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বলে, ‘আব্বা-আম্মার কাছে শুনছি, নদী নাকি আগে অনেক দূরে ছিল। এখন ভাঙতে ভাঙতে তো আমাদের স্কুলের কাছে চলে আসছে। সবাই বলতেছে পানি কমলে নাকি স্কুলটা ভেঙে যেতে পারে। স্কুলটা ভাঙা থেকে কোনোভাবে রক্ষা করা যায় না?’
আব্দুর রহমান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, স্কুলসহ নদী পাড়ের শতাধিক বাড়ি ভাঙনে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে তাদের বসতির এত কাছে নদী ছিল না। পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে নদী লোকালয়ের দিকে এগিয়ে এসেছে।
রেহেনা বেগম বলেন, ‘এই গ্রামে বিয়া হইছে প্রায় ৫০ বছর অইয়া গেল। এহান থেকে গাং ছিল মেলা দূরে। মেল্লা গর ছিল। সব এহন গাঙে (নদীতে) চইলা গেছে। এই ইস্কুলডাও মনে অয় এইবার বাইংগা যাইব।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন হয়েছে। পানি এখন কমে যাচ্ছে। এখনও ভাঙনের সম্ভাবনা আছে। স্কুলটি কর্তৃপক্ষের নজরে আছে। ভাঙনে যেন এটি বিলীন না হয় সেজন্য বালুভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।নদীর মর্ফোলজিক্যাল সমস্যার কারণে গতিপথ পরিবর্তনের জন্যই এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল।
গত দেড় মাসে নদী প্রতিরক্ষা কাজের নয়টি স্থানে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। ঝুঁকিতে আছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধও।