ফিক্সেশন জটিলতায় ১৩তম গ্রেড, উদ্বেগ বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের
১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। তবে ফিক্সেশন জটিলতায় ১৩তম গ্রেডে এখনো বেতন পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া দুই নিয়োগবিধি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় বিপুল সংখ্যক সহকারী শিক্ষকের এ গ্রেডে বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরা ১৪তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকেরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের পরিবর্তিত নিয়োগবিধিতে যোগ্যতার শর্তের কারণে বেতন নির্ধারণ করতে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে অসংখ্য শিক্ষক বঞ্চিত হতে যাচ্ছিলেন।
কারণ, ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি জারি হওয়ার আগে ২০১৩ সালের নিয়োগবিধিতে মেয়েদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল এইচএসসি পাস আর ছেলেদের স্নাতক পাস। পরে ২০১৯ সালের নিয়োগবিধিতে তা পরিবর্তন করে ছেলে-মেয়ে সবার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি করা হয়। ১৩তম গ্রেড নতুন নিয়োগবিধি অনুযায়ী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যারা এইচএসসি ও তৃতীয় শ্রেণির স্নাতক পাস করে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এখন আগের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যাঁরা সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদেরও ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি করেছেন তারা। একইসঙ্গে উচ্চধাপে বেতন দেওয়ার দাবি তাদের। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে সবাইকে ১৩তম গ্রেডে বেতন দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সেই চিঠির জবাব এখনো মেলেনি জানিয়ে শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, নিয়োগবিধির শর্তের কারণে অনেক শিক্ষক বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘১৩তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে দীর্ঘদিন। কিন্তু জটিলতার কারণে এখনও বেতন ফিক্সেশন হয়নি। এখন আশঙ্কা করছি, যারা এইচএসসি পাস করে নিয়োগ পেয়েছে, তারা বঞ্চিত হতে পারেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তার জবাবও আসেনি। আমরা চাই, দ্রুত শিক্ষকদের হয়রানি থেকে মুক্ত করা হোক। সবাইকে ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হোক।’ চলতি মাসেই বেতন গ্রেড জটিলতার সমাধান হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের নেতা টি এম জাকির হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০১৯ সালের নিয়োগবিধিতে এখনো কোনো নিয়োগ হয়নি। সেজন্য ২০১৩ সালের নিয়োগবিধিতেই সবাইকে সুবিধা দেওয়া উচিৎ। কিন্তু ২০১৯ সালের নিয়োগবিধির কথা বলে শিক্ষকদের বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চলছে। অথচ এই গ্রেডটা দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষকদের। এজন্য আমরা চাই, নিয়োগবিধি প্রসঙ্গ না তুলে সব সহকারী শিক্ষকের ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হোক।’
এদিকে গত ১১ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের বিরাজমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি জারি হওয়ার পূর্বের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে বেতন গ্রেড-১৩ এর সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর আগে এবং পরে নিয়োগ পাওয়া সবার ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।