০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৪৮

দুঃখ ঘুচেনি প্রাথমিকের শিক্ষকদের, এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক  © ফাইল ফটো

৫ অক্টোবর প্রতিবছর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। শিক্ষকদের অবদানকে নানাভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে এই দিনটিকে ঘিরে। যাদের অবদানকে স্মরণ করে বাংলাদেশে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়, যাদের হাতেই প্রথম শিক্ষার আলো বিস্তার শুরু হয়, কেমন আছেন সেই শিক্ষকরা, বিশেষ করে মানুষ গড়ার আসল কারিগর নামে খ্যাত প্রাথমিক শিক্ষকরা?

দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় ধরনের শিক্ষকই আগে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রধানশিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদা দেয়া হয়। একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এখনো ৩য় শ্রেণির পদমর্যাদায় রয়েছেন।

এদিকে অনেক প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন যারা অন্যান্য চাকরিতে সুযোগ পেয়েও শুধু শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে নিজের জন্য এই পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। শুধু কোমলমতি শিশুদের ভালবাসায় সিক্ত এসব শিক্ষকরা।

এ অবস্থায় গতকাল সোমবার পালিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে। এ বছর ইউনেসকো দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে ‘শিক্ষক: সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা’।

দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আগের চেয়ে বাড়লেও মর্যাদায় এগোচ্ছে না। তারা এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যা বিশ্বেই বিরল। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি গত ১০ বছরেও। ফলে শিক্ষকরাও নিজ পেশায় মনোযোগ না দিয়ে অন্যান্য কাজে ঝুঁকে পড়ছেন।

এসব শিক্ষকের মতোই সারাদেশের লক্ষ লক্ষ সহকারী শিক্ষকের মনোবেদনার কারণ একই সুতোয় গাঁথা। তাইতো মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষকতা পেশাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিতে রাজি হচ্ছেন না। বলা যায় যে নিম্ন বেতন ও সামাজিক পদমর্যাদার জন্য প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না সরকার।

এদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে দিনে দিনে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়টি শিক্ষার জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

তিনি আরো বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করার জন্য শিক্ষার সামগ্রিক বাজেট বাড়াতে হবে এবং প্রকৃত মেধাবীদের এ পেশায় আনতে উচ্চ বেতন ও পদমর্যাদা বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব কাটাতে নিম্ন মেধার লোকজন শিক্ষকতায় ঢুকে পড়েছে। এতে জ্ঞানের চর্চা ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো জাতি তৈরি করতে ভালো শিক্ষক দরকার। এ জন্য আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সবার আগে নজর দিতে হবে। সেখানে মেধাবী শিক্ষক দরকার। মেধাবীদের প্রাথমিকের শিক্ষকতায় আনতে হলে ভালো বেতন দিতে হবে। তাঁরা যাতে দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও মেধাবীদের আনতে হবে। এ জন্য যোগ্য লোককে উপযুক্ত বেতন দিতে হবে। আমাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ এখনো কম, এটাই বড় সমস্যা।’

জানা গেছে, দেশে ৬৫ হাজার ৬২০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় চার লাখ। তাঁদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষক এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। সম্প্রতি তাঁদের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এই গ্রেডে ১১ হাজার টাকার স্কেলে শিক্ষকরা বেতন পাবেন সাকল্যে ১৯ হাজার টাকা। আর প্রধান শিক্ষকদের সম্প্রতি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হলেও এখনো তাঁরা সমপদের বেতন-ভাতা পাননি। তাঁরা ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে সাকল্যে বেতন পাবেন ২১ হাজার ৫০০ টাকা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে মূল বেতন দেয় সরকার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও বেতন-ভাতা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। যেসব শিক্ষকের বিএড নেই তাঁরা শুরুতে ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতন পান। এর বাইরে তাঁরা সামান্য বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমরা মূল বেতনের বাইরে এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস পাই, যা দীর্ঘ ১৬ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। মুজিববর্ষেই শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমাদের একমাত্র দাবি।