বিদায় নিচ্ছেন মো. ফসিউল্লাহ, বললেন— অনেক কিছুই করতে পারিনি

  © ফাইল ফটো

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান অতিরিক্ত সচিব মো. ফসিউল্লাহ্। কিন্তু বছর পূর্ণ না হতেই অবসরে চলে যাচ্ছেন তিনি। আগামীকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তার শেষ কর্মদিবস। এ অবস্থায় তাকে ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অল্প সময় এ দায়িত্বে আসলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন মো. ফসিউল্লাহ। সেগুলো দ্রুতই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়।

ডিপিই মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রাথমিকের অনেক কাজই শুরু করেছিলাম। তবে শেষ করতে পারিনি। করোনার কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারছি না।’

এ সময় বর্তমান প্রথমিক শিক্ষার হাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কথা বলা ঠিক হবে না। শেষ কার্যদিবসের পরে প্রাথমিকের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলব।’ এছাড়া প্রাথমিকের নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত সরকারের বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, মো. ফসিউল্লাহ চলে গেলে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি ৩) ও চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি ৪) বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হতে পারে। শিক্ষকদের অনেক সমস্যার সমাধানও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে দীর্ঘমেয়াদে মহাপরিচালক চান সংশ্লিষ্টরা। চুক্তিতে হলেও মহাপরিচালক হিসেবে একজনকে কমপক্ষে তিন বছর রাখা জরুরি বলে শিক্ষকরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বদরুল আলম মুকুল বলেন, ‘ফসিউল্লাহ স্যার খুবই শিক্ষকবান্ধব ছিলেন। নিয়োগ বিধিমালা, শ্রান্তি-বিনোদন ভাতাসহ নানা সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি চলে গেলে অনেকগুলো কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালক স্যার নিজে ফোন দিয়ে শিক্ষকদের খোঁজ-খবর নিতেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অনেক কিছুই করেছেন। তিনি আরও কিছুদিন থাকলে অসমাপ্ত কাজগুলোও শেষ করে যেতে পারতেন।’

এর আগে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বর্তমান মহাপরিচালক এত দ্রুত যাবেন ভাবিনি। তবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে শুনছি। কিন্তু আর মাত্র তিনদিন বাকি থাকায় এরমধ্যে তা সম্ভব হবে কিনা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালকদের আরও দীর্ঘসময়ে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। না হলে তারা যে কাজগুলো শুরু করেন, তা অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। এছাড়া তাদের পরিকল্পনা করতেও দীর্ঘ সময় চলে যায়। মহাপরিচালকে কমপক্ষে তিন বছর এ দায়িত্বে রাখা প্রয়োজন।’

জানা গেছে, ডিপিইতে এক বছরে দু’জন মহাপরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় গত বছরের ২০ জানুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে পাঠানো হয় মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে।

পরে ৩০ জানুয়ারি ওই পদে নিয়োগ পান এ এফ এম মনজুর কাদির। গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। এক বছরেরও কম সময় অধিদফতরে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর বছর পার না হতেই ফের বিদায় নিচ্ছেন মো. ফসিউল্লাহ। এ অবস্থার অবসানে দীর্ঘমেয়াদে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে ভিন্ন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সূত্র জানিয়েছে, মো. ফসিউল্লাহ্ ফের মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। প্রাথমিক শিক্ষার স্বার্থেই এই নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। অন্যথায় তিনি যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন তা পিছিয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বর্তমান মহাপরিচালককে চুক্তিতে রাখলে প্রাথমিকের লাভ হতো।’ কিন্তু বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার বেলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ