প্যানেল নিয়োগের নামে চাঁদা, সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি দিল মন্ত্রণালয়
গত এক বছর ধরে প্যানেল শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫৬ হাজার ৯৩৬ প্রার্থী। আন্দোলনের নামে বিভিন্ন ভাবে প্যানেল প্রত্যাশীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল গঠন করে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হবে মর্মে তথ্য ছড়িয়ে একটি চক্র নিরীহ প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্যানেল হতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হবে মর্মে বিভ্রান্ত হয়ে কোনো মহলের প্ররোচনায় কোন প্রকার অর্থ লেনদেন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে প্রায় ৩৬ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এর আগেই রাজধানীতে বড় ধরণের জমায়েত করতে চায় আন্দোলনকারীরা। এজন্য তারা প্যানেল প্রত্যাশীদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা তুলছেন। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের কাছে গত কয়েকদিন প্যানেলের নাম করে চাঁদা আদায়ের বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। আমি চাকরি প্রত্যাশীদের অনুরোধ করব এই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। প্যানেলের নাম করে কেউ আপনাদের কাছে টাকা চাইলে আপনারা আমাদের জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল গঠন করে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনভাবেই বাতিল করা হবে না। যথা সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে প্যানেলের নাম করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হাসান। তিনি দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ। প্যানেলের দাবিতে আমাদের সাথে যারা আন্দোলন করেন তারা স্বেচ্ছায় আসেন। তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার চাঁদা নেওয়া হয় না। আমাদের নাম ভাঙিয়ে অন্য কেউ এমন কাজ করলে সেই দায়ভার আমরা নিব না।
আন্দোলন করতে আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক। প্রাথমিকের শূন্য পদগুলোতে আমাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি। অতিতেও আন্দোলন করে প্যানেলের দাবি আদায় করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ২০১০ ও ২০১১ সালের পুল ও প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা তাদের নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে উচ্চ আদালতে ৪৯০টি রিট আবেদন করেন। আবেদনে পুল ও প্যানেলভুক্ত নিয়োগের অপেক্ষায় থাকাদের নিয়োগ নিশ্চিত না করে কেন নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।
রিট আবেদনের পর ২০১৪ সালের নিয়োগ স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। চার বছর পর ২০১৮ সালে রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হলে আবেদন করা প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ প্রার্থী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ২৯ হাজার ৫৫৫ জন। তবে নিয়োগ দেওয়া হয় ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে। উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জন প্যানেলভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।
একই বছর আবার শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করেন ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৫৫ হাজার ২৯৫ জন। নিয়োগ দেওয়া হয় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে। উত্তীর্ণ ৩৭ হাজার ১৪৮ জন পুল বা প্যানেলভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।