প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা প্রস্তুত
সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার এই পরিকল্পনার প্রজ্ঞাপন শিগগিরই জারি করবে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তা নির্দেশনা আকারে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
করোনার কারণে গত পাঁচ মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের এই ঘোষণা আছে। ঠিক কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখনই খোলা হোক, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার একটি পরিকল্পনা (স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান) তৈরি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ পরিকল্পনার নির্দেশনাগুলো চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেনের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। সেখানে এ পরিকল্পনার খসড়ায় নানা সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। পরে আরেকটি সভা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা করে এ সংক্রান্ত প্রচার শুরু করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্কুল খুলে দেওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখে মাস্ক পরা, হাত পরিস্কার, থার্মোমিটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতিদিন সব বিষয়ের ক্লাস হবে না। কবে কোন বিষয়ের ক্লাস হবে তা শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সদস্যরা নির্ধারণ করবেন। আলাদাভাবে তিনটি ক্যাটাগরিতে ৫০টির বেশি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ক্লাস পরিচালনা করা হবে এ পরিকল্পনা অনুযায়ী।
সূত্র আরও জানায়, করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধিগুলো অনুসরণ করে এসব নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুর উল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ৫০টির বেশি দিকনির্দেশনামূলক গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা এলে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, দিকনির্দেশনাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুক, অনলাইন, ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমসহ সকল মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এছাড়াও করোনাকালীন বার্ষিক উন্নয়ন বাবদ অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ পরিকল্পনার খসড়ায় দেখা গেছে, বিদ্যালয় খোলার সরকারি নির্দেশনা দেবার পর নূন্যতম ১৫ দিন আগে শিক্ষক, কর্মচারী এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যালয়কে পরিচ্ছন্ন ও ক্লাস নেওয়ার উপযোগী করে তুলতে হবে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের গেটে বা প্রবেশের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে সবাইকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করানো হবে।
স্কুল রি-ওপেনিংয়ের পাঠ্যক্রম পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, করোনাকালীন সময়ের আগের মতো আর এক বেঞ্চে তিন বা চারজন শিক্ষার্থী বসতে পারবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এক বেঞ্চে দু'জন শিক্ষার্থীকে বসাতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগের মতো আর সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে না। একটি স্তরে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন অথবা প্রতিদিন দুই-তিনটি ক্লাস নেওয়া হবে। তবে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণিকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া পাঠের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নির্বাচন করে কোন দিন কোন বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও এসএমসির সদস্যদের নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয় চলাকালীন করণীয় হিসেবে এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, একসাথে শিক্ষার্থীরা ভিড় করে খেলাধুলা, আড্ডা-গল্প করতে পারবে না। সামাজিক দূরত্ব রেখে হাঁটা-চলা করতে হবে। নোটিশ বোর্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া স্কুলে থাকা শিক্ষার্থীর হঠাৎ করে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।
চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে দেশে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষার অন্য স্তরের মতো প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধেরও পাঁচ মাস অতিক্রম হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির এই দীর্ঘ সময়ে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঠিক কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।