প্রাথমিকে ছাত্র ঝরে পড়া বাড়ছে, কমছে মেয়েদের
সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও প্রাথমিক স্তর থেকে ১৮ শতাংশের শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। আর এদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, প্রাথমিকে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলেও ছেলেরা বেশি ঝরে পড়ছে।
২০১৯ সালে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দুই কোটি এক লাখ ২২ হাজার ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে ছাত্রী এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৪ জন; যা ৫১ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ২৮ লাখ দুই হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৯৪২ জন ছাত্র। আর ছাত্রী ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৩ জন।
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, ২০০৫ সালে প্রাথমিকে ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ে। ২০১০ সালে এই হার কমে দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৮০ শতাংশে। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল ছাত্র এবং ছাত্রী ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রাথমিকের ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে পঞ্চম শ্রেণির মধ্যেই। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ ছাত্র। আর ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছাত্রী। ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার তিন দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
এ ব্যাপারে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অনেক আগে থেকেই উপবৃত্তি পাওয়ায় ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার কমেছে। ছাত্রদের ক্ষেত্রে কয়েক বছর আগে এটি শুরু হয়েছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন দাবি করেছেন, ঝরে পড়ার যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে, প্রকৃত চিত্র তার থেকে ‘অনেক ভালো’। সরকারের নানান উদ্যোগে এই হার কমেছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়া হলেও ২০১৫ সাল থেকে কয়েকটি শর্তে ছাত্রদেরও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। গত জানুয়ারি থেকে প্রাক-প্রাথমিকের মাসে ৭৫ টাকা, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসে ১৫০ টাকা এবং অষ্টম শ্রেণি খোলা হয়েছে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেসব স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাসে ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ছাত্রদের উপবৃত্তি দেওয়া হলেও সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। মূল ধারার সব বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ সুবিধাবঞ্চিতরাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পড়াশোনা করে। কিন্তু তারাই উপবৃত্তি পাচ্ছে না। ঝরে পড়া কমাতে সরকারকে উপবৃত্তির পরিধি বাড়াবে হবে।
তিনি বলেন, দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ঝরে পড়ার হার বেশি। দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই পারিবারিক কাজে সন্তানদের সম্পৃক্ত করছেন। নরসিংদীর অনেক এলাকায় অল্প বয়সের শিশুদের তাঁতের কাজ করানো হয়। এভাবে অনেক শিশু ঝরে পড়ে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ঝরে পড়ার হার আসলে অনেক কম, সিঙ্গেল ডিজিটে চলে এসেছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছেন, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার আরও কম। এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগও ভূমিকা রাখছে।