প্রাথমিকে প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ কেন চাই?
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এ শিক্ষা অর্জনের প্রথম ধাপই প্রাথমিক শিক্ষা। যেটাতে শিক্ষক হিসাবে চাকরি করার ইচ্ছা দেশের অনেক তরুণদেরই প্রায় প্রথম পছন্দ থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক পদে (প্রায় ১০ হাজার পদে) সার্কুলার দেওয়া হয়। মানুষ গড়ার কারিগর আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সে সময়ে প্রায় ১৪ লক্ষ প্রার্থীর সঙ্গে আমিও আবেদন ফরম পূরণ করি।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল ও ২০১১ সালে প্রকাশিত পুল ও প্যানেলের নিয়োগে আইনি জটিলতার কারণে নিয়োগ কার্যক্রম প্রায় ৪ বছর আটকে থাকে। আইনি জটিলতা শেষে পুল ও প্যানেল থেকে ৪৯০টি রিটের বিপরীতে ৪২ হাজার ৬১১ জন সহকারী শিক্ষক হওয়ার সু্যোগ পায়। এত বড় প্রক্রিয়ায় ৪ বছর লেগে যায়। ফলে ২০১৪ সালের পরীক্ষা ২০১৮ সালে কয়েকটা ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। যা ছিল স্বচ্ছ এবং কলঙ্কমুক্ত আর তার কারণেই এ পরীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের কোথাও কোন বিতর্কের খবর পাওয়া যায়নি।
ফলে যারা প্রকৃত মেধাবী তারাই কেবল লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে ছিল পুরুষ ৯ হাজার ৮৯ এবং মহিলা ২০ হাজার ৪৬৬ অর্থাৎ মোট ২৯ হাজার ৫৫৫ জন। এতে ২০১৪ থেকে ২০১৮ অর্থাৎ চার বছরে নতুন কোন সার্কুলার না পাওয়ায় সকলের মনে শিক্ষক হওয়ার বাসনা আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ দপ্তর থেকে যখন ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে ফলাফল দেয়। তখন এ সব প্রার্থীদের মধ্যে ৪ বছরে কোন সার্কুলার না পেয়ে যারা সরকারি চাকরি বয়স হারিয়েছে তাদের সহ আমরা যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি তারা সবাই চার বছর পরেও ২৩৩ জন কম নিয়োগ দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়ি।
২০১৮ সালের জুলাই মাসের নতুন সার্কুলারে আমাদের অধিকাংশ লিখিত উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়াতে আমরা আর আবেদন করতে পারি নাই। এতে আমাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সকল কর্ম কর্তার কাছে আকুল আবেদন ও অনুরোধ জানাচ্ছি- আমাদেরকে এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষক সংকট নিরসনের লক্ষে ২০১৪ সালের স্থগিত প্রাইমারী নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীকে মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনা করে প্যানেলের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ করে দেন। এর মাধ্যমে দেশের কচি কচি ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দানে আমাদেরকে সুযোগ করে দিন। সেই সাথে মুক্ত করে দিন এই বেকারত্ব নামের অভিশপ্ত শিকল থেকে। আর শিক্ষকতা পেশায় যেতে পারাটাই হবে মুজিব বর্ষে আমাদের শ্রেষ্ট উপহার।
লেখক: ২০১৪ সালে স্থগিত প্রাইমারী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ সালের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী