প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল জটিলতা ও সমাধান
প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল নিয়ে লেখালেখি কারার ইচ্ছে আমার তেমন একটা ছিল না। এরও বিভিন্ন কারণ আছে। সম্প্রতি টাইমস্কেল নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কাঁদা ছুঁড়াছুড়ি চলছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের বঞ্চনার কথা ভেবে এবং বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার করার জন্য শেষ পর্যন্ত লিখতে বাধ্য হলাম।
টাইমস্কেল মামলার আপিলের শুনানির নিস্পত্তি বহু আগেই হয়ে যেত। এতো দিনে আমাদের শিক্ষকগণ তাদের টাইমস্কেলের বকেয়াসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার এরিয়ার সহ পেয়ে যেতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের মধ্যে কিছু শিক্ষকের অসহযোগিতা ও টাইমস্কেলের মামলা নিয়ে বিভ্রান্তিকর নেতিবাচক মন্তব্য ও এর বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখিই প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল না পাওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও মামলা পরিচালনা করার মতো সামর্থও আমাদের তখন ছিলো না। এর পাশাপাশি আমাদের মধ্যেও সম্মন্বয়েরও কিছুটা অভাব ছিলো। এসব মিলে বিভিন্ন কারনে মামলার শুনানির নিষ্পত্তি করতে আমরা পিছিয়ে পরি। যখনই আমরা টাইমস্কেল মামলা নিয়ে নড়েচড়ে বসি। তখনই দুষ্ট চক্রের কিছু কিছু প্রধান শিক্ষক টাইমস্কেল মামলা নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলতে শুরু করে দেয়।
যেমন টাইমস্কেল প্রপ্তির জন্য মামলার কোন প্রয়োজন নেই। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলেই পেয়ে যাবেন। আপনারা বিভাগীয় উপপরিচালক বরাবর আবেদন করলেই টাইমস্কেল পেয়ে যাবেন। নানা ধরনের কথা। টাইমস্কেলের জন্য কাউকে কোন প্রকার টাকা প্রদান করবেন না। যারা মামলা করেছে তারা দালাল, মামলার কথা বলে চাঁদা বাজি করছে। ওটা চাঁদা বাজ সমিতি ইত্যাদি ইত্যাদি নেতিবাচক মন্তব্য।
তারা আরও প্রস্তাব দেন যে, টাইমস্কেল বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকগণ প্রয়োজনে প্রতিজেলা থেকে দুই জন করে ঢাকাতে আসুন বসে আলাপ আলোচনা করি। এভাবে উনারা বহুবার ঢাকাতে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে দিন তারিখ দিয়েছিলেন। কিন্তু একবারও ঢাকাতে তারা বসতে পারেননি। তাদের কথায় শিক্ষকগণ সায় প্রদান করেননি।
ঢাকাতে মিটিং ঢাকার পিছনে ওনাদের মতলব ছিল ভিন্ন শুধুই টাইমস্কেল নয় এই টাইমস্কেলকে পুঁজি করে আরেকটি প্রধান শিক্ষক সমিতির জন্ম দেওয়া। কিন্তু সাধারণত শিক্ষকগণ বুঝতে পেরে তাদের কথায় খুব একটা সারা দেননি। ওনাদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে গেছে। এই ব্যর্থতার যন্ত্রনায় এখন আবোল তাবোল কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। ওনারা ব্যর্থ হলে কি হবে? আমাদেরকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়ে গেছেন। তা নাহলে অনেক আগেই মামলার শুনানির নিষ্পত্তি হয়ে যেত।
এছাড়াও আমাদের প্রধান শিক্ষক সমিতির অপর অংশও বলতে শুরু করে দিল টাইমস্কেল আদায় করতে তার এক হাত, দুই হাত দূরে আছেন। কখনো পাঁচ সদস্যের টাইমস্কেল বাস্তবায়ন কমিটি কখনো তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে শিক্ষকদের আইওয়াস করা মাত্র। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হবে কি করে? তাদের মতলব ভালো ছিলো না। এসব কারনে শিক্ষকগন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যান। এই সব কুচক্রী মহল কখনো চাননি শিক্ষকরা আমাদের সমিতির মাধ্যমে টাইমস্কেল পাক। তাহলে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এমনকি ভবিষ্যতে সমিতি করাও কঠিন হয়ে যাবে।
এই টাইমস্কেল বিরোধী চক্রদ্বয় এখন বুঝে ফেলেছেন যে, মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বেশি দিন টিকে থাকা য়ায় না। এ সব বিষয় নিয়ে এখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ফ্যাসাদ শুরু হয়ে গেছে। সাধারন শিক্ষকগণ ওদের পিছন থেকে সরে যেতে শুরু করেছে। এখন শিক্ষকরা সম্পূর্ণভাবে বুঝে ফেলেছেন যে, এসব দুষ্ট চক্রের পক্ষে টাইমস্কেল আদায় করা সম্ভব নয়। কারণ ওদের হাতে কোন অস্ত্র নেই। ওদের অভ্যাস পরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করা। এতোদিন শুধুই মিথ্যা আস্ফালন ও গলাবাজি ছাড়া কিছুই করে নাই।
এখন শিক্ষকগণ পরিষ্কার হয়ে গেছেন যে, মামলার শুনানির নিস্পত্তি ছাড়া টাইমস্কেল পাওয়া কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। এছাড়াও আমাদের সচিব মহোদয় বিভিন্ন সভা ও আলাপচারিতায় পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, টাইমস্কেল পেতে হলে অবশ্যই মামলার শুনানির নিস্পত্তি করে আসতে হবে।
এখন মামলার ইতিহাস ও শেষ অবস্থা জেনে নিন। ২০১৬ সনে সেপ্টেম্বর মাসে ১০৯ জন প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। তাদের মধ্যে আমাদের সমিতির মহাসচিব দেলোয়ার হোসেন কুসুম ও অর্থ সম্পাদক আব্দুর রহমান সাহেব অন্যতম। হাইকোর্ট মামলা নং ১০৮৮১/১৬। রিটের মাত্র তিন মাস কর্মদিবসে, আদালত ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এই রায়ের বিপক্ষে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর আপিল করেন। এই আপিল নিষ্পত্তির জন্য কজলিষ্টে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সিরিয়াল অবশ্য নিচের দিকে আছে। এখন আমাদের কাজ হলো কজ লিষ্টে এগিয়ে আনা ও শুনানির নিস্পত্তি করা। মামলার সকল প্রকার ইভিডেন্স ও কাগজ পত্র আমার কাছে রক্ষিত আছে।
এই মামলার রায়ের কিছু অংশ আমি এখানে উদৃত্তি করছি। অংশ টুকু পড়লেই আপনারা টাইমস্কেল পাবেন কিনা? পরিষ্কার হয়ে যাবেন। রায়ে বিচারক বলেছেন (আংশিক) -“why the respondents should not be directed to re -fix petitioners upgraded pay scales by allowing them all the benefits of time scals up to 14/12/15 counting thir period of service from the date of thir joining in thr post of Head Teacher with all arreas from 09/03/14 and onwards and to remove all kind of disparity discrimination in pay.”
এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, যে সকল প্রধান শিক্ষক ২০১৪ সালের ৯ মার্চ হতে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইমস্কেল প্রাপ্য হয়েছেন তারা টাইমস্কেল ও এরিয়ারসহ সকল প্রকার সুবিধা পাবেন। এতে কারোর সন্দেহের অবকাশ আছে বলে মনে করি না। বর্তমান করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে কোর্ট বন্ধ আছে। কোর্ট খুলেই শুনানির নিস্পত্তির জন্য চেষ্টা করা হবে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি।