প্রাথমিক শিক্ষকের লাশ আটকে রাখলো হাসপাতাল কর্মীরা
চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের দাবি, তিনি অনেক দিন ধরে হার্ট ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভূগছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কোনো ডাক্তার বা নার্স তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। আমরা বাইরের থেকে অক্সিজেন এনে দিয়েছি। কান্না করে অনুরোধ করার পরও তাদের মন গলেনি।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ওই স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়। এদিকে ডাক্তারদের কাজে বাধা ও যন্ত্রপাতি নষ্ট করার অভিযোগে মারা যাওয়া ব্যক্তির মৃতদেহসহ তার ছেলে-মেয়েদের দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয় বলে জানা গেছে।
তবে হাসপাতাল কর্তপক্ষের অভিযোগ, মারা যাওয়া ব্যক্তির মেয়েরা ডাক্তারদের ওপর হামলা করেছে। তাই তাদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দুই ঘণ্টা পর জরুরি বিভাগের বারান্দা থেকে বের করা হয় মৃতদেহ। পরে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো: মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে গেলে বিকেল ৫টার দিকে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন স্বজনরা।
জানা গেছে, হার্টের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আসেন জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদি নান্দানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রশিদ (৮০)। তিনি উপজেলার ধনকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু করোনা উপসর্গ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে রাজি হয়নি জরুরি বিভাগের ডাক্তার। পরে ভর্তি করলেও হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফেলে রাখা হয় বারান্দায়।
মৃতের ছেলে আশুগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কারিগরি কলেজের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার বাবার করোনা নেগেটিভ। তিনি অনেক দিন ধরে হার্ট ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভূগছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কোনো ডাক্তার বা নার্স তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। আমরা বাইরের থেকে অক্সিজেন এনে দিয়েছি। কান্না করে অনুরোধ করার পরও তাদের মন গলেনি।
তিনি বলেন, বার বার মিনতি করার পরও ডাক্তার, নার্স না পেয়ে আমার বোনেরা ডাক্তারদের সামনে ক্ষোভ জানায়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হন। অবহেলায় বাবার মৃত্যুর পরও আমার মা, তিন বোন ও আমাকেসহ বাবার লাশ আটকে রাখে তারা। মামলার ভয় দেখায়। দুই ঘণ্টা পর আমাদের ছাড়া হয়।
তবে জরুরি বিভাগের ডাক্তার রাকিব দাবি করেন, মারা যাওয়া ব্যক্তির তিন মেয়ে আমাদের ডাক্তারদের ওপর হামলা করেছে। পিপিই ছিঁড়ে ফেলেছে। তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়া হয়। এদিকে ডাক্তারের অবহেলার রোগীর মৃত্যু এবং লাশসহ স্বজনদের আটকে রাখার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানান কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো: মুজিবুর রহমান।