করোনায় আক্রান্ত যত প্রাথমিক শিক্ষক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর থেকে মুক্তি মেলেনি প্রাথমিক শিক্ষকদেরও। দেশে বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কতজন আক্রান্ত তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা শতাধিক বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে একজন শিক্ষকের।
রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গত মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তার বাবা ও মা। ফলে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত তিনি। জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের অন্তত ১৫ জনের অবস্থা এখন মুমূর্ষু। তবে নিজ উদ্যোগেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নিম্ন বেতনের এসব শিক্ষকরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার নিয়ে বড় সংকটে পড়েছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যও আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে।
অবশ্য আক্রান্ত কয়েকজন শিক্ষক সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের দক্ষিণ জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উম্মে হানী, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অবস্থিত লক্ষ্মণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তানজিনা আক্তার, লালমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোকেয়া আক্তার এবং মাধবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৃপ্তি রানী রয়েছেন।
আক্রান্ত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। তবে স্থানীয়ভাবে শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আক্রান্তদের নানা ধরনের সহযোগিতা করছে। চিকিৎসকের পরামর্শ লাগলে তাও করা হচ্ছে। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তিও আছেন বেশ কয়েকজন।
কুমিল্লার বাড়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করোনায় আক্রান্ত সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গত ৯ থেকে ১২ মে সরকারি সহায়তার তালিকা যাচাই, ১৪ থেকে ১৬ মে পঞ্চম শ্রেণির ডিআর ও উপবৃত্তির তালিকা তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৮ মে থেকে করোনার লক্ষণ দেখা দেয় তার। পরে ২৩ মে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
কুমিল্লার আরেক আক্রান্ত শিক্ষক কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুম মিয়া বলেন, তার পরিবারের আরও ছয়জন করোনায় আক্রান্ত। ঈদের দিন তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া তার মা সহকারী শিক্ষক, তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের উত্তর পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা শবনম মারা যান। এছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে আছেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন মিয়া, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার, গাজীপুরের জয়দেবপুর পিটিআইর ইনস্ট্রাক্টর দিলারা বেগম।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী ওসমান গণি ও সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী শিশাকর কুমার ঘোষ করোনায় আক্রান্ত। এছাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা বেগম, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আক্তার, কে আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইতি ঠাকুর, পাবনার সাঁথিয়ার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইফুল ইসলাম ও ইসরাত জাহান, কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুম মিয়া এবং তার মা দক্ষিণ ভোমরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাফুজা বেগমও আক্রান্ত।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সফিকুল ইসলাম, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আলমদীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমেনা বেগম, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিপি আক্তার, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার জৈনসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কামাল হোসেন, বরিশাল সদরের কিশোর মজলিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাহেদা আক্তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি থানার আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহাবুবা সুলতানা, চাঁদপুর সদরের আক্কাছ আলী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোজিনা হাবিব।
প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজারের নলবহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মো. সায়েম ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হৃদয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত শিক্ষকদের অধিকাংশ মাঠ প্রশাসনের কাজ, সরকারের সহায়তার কাজ এবং উপবৃত্তি, ডিআরসহ বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে শিক্ষকরা বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন তিনি।