ছয় মাস বন্ধ উপবৃত্তি: অর্থ ছাড় নিয়ে যা বললেন প্রাথমিকের ডিজি
ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ওই প্রকল্পের অর্থ দ্রুত ছাড় দেয়ার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ফসিউল্লাহ দেখছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
একইসঙ্গে দ্রুত উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত উপবৃত্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি তিনি দেখবেন।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। দেশের ৬৬ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৩৩ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের সবাই সরকারের দেওয়া উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। তারা সর্বশেষ উপবৃত্তির অর্থ হাতে পেয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর আর কোনো টাকা পায়নি।
সারাদেশের সব শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা ও তাদের ঝরে পড়া রোধ করতে সরকার এই উপবৃত্তি চালু করেছিল। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশি পড়ালেখা করে। করোনার কারণে দরিদ্র পরিবারগুলোতে এখন চরম আর্থিক টানাপোড়েন। এই দুর্দিনে উপবৃত্তির যৎসামান্য টাকা হাতে পেলে বড় উপকার হতো জানান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অর্থ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই এখন দ্রুত প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক হচ্ছে না। যে কোনো সময় বিশেষ অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে অতি দ্রুত প্রকল্পটির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি তিন মাসের উপবৃত্তির অর্থ একসঙ্গে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ছয় মাসের উপবৃত্তি বকেয়া। এই টাকা শিক্ষার্থীরা এখনও পায়নি। এ ছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী 'মুজিববর্ষ' উপলক্ষে নতুন জামা, ব্যাগ ও জুতা কেনার জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বছরের চার মাস পার হতে চলেছে, এ টাকাও ছাত্রছাত্রীরা এখনও পায়নি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, সরকারের উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এই দুর্যোগকালে কিছু টাকা হাতে পেলে তারা অবশ্যই খুশি হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইল ফোনে প্রতি মাসে এক সন্তানের জন্য ১০০ টাকা, দুই সন্তানের জন্য ২০০ টাকা ও তিন সন্তানের জন্য ২৫০ টাকা হারে উপবৃত্তির টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের জন্য মাসে ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই উপবৃত্তি প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে ১৫০ টাকা করার কথা রয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষা উপকরণ কেনার টাকা চলতি বছর জানুয়ারি থেকে চালু করা হবে। গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবের সময় এই টাকা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল।