পিটিআইতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার নারী প্রশিক্ষক ও শিক্ষিকারা

  © ফাইল ফটো

প্রাথমিক শিক্ষকদের পাঠদান ও নীতি-নৈতিকতা বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই)। বিশেষত নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পিটিআইতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে বিশেষত নারী প্রশিক্ষক ও শিক্ষিকারা নানা ধরণের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পিটিআইয়ের নারী প্রশিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, সারাদেশে কোনো পিটিআইতে কোনো ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না নারী প্রশিক্ষক ও শিক্ষিকারা। এতে নারী ও শিশুদের নানা ধরণের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। পিটিআই কর্তৃপক্ষও ডে কেয়ার না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।

নারীদের হয়নারির শিকার হওয়ার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রামের পটিয়া পিটিআই থেকে। সেখানে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ, প্রশিক্ষকদের কাছে নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। এমনকি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, বেশি নম্বর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আবার কারও প্রেমের সম্পর্ক ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে অপকর্ম করার বিষয় সামনে এসেছে।

তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও পুরুষ প্রশিক্ষকরা আপত্তিকর কথা বলেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন তারা। ফলে তাদেরকে পটিয়া পিটিআই থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর (নেপ) অধীন দেশের পিটিআইগুলো পরিচালিত হয়। বর্তমানে দেশে ৬৭টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ৬৬টি এবং বেসরকারি একটি। এর কোনটিতেই ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ফলে নারীরা তাদের সন্তান নিয়ে যেতে পারেন না। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৯ হাজার ৯৫৪ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি রয়েছেন পিটিআইগুলোতে। এরমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই নারী। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা দুই লাখ ৩৬ হাজার ৩১৮ জন। এরমধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার ৭৩১ জন বা ৬৮ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ নারী। তাদের অনেকেই প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে সন্তানদের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ তো রয়েছেই।

দেশের একটি পিটিআইতে কর্মরত একজন নারী প্রশিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, তিনি কয়েকবছর ধরে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু কোনও পিটিআইতে ডে কেয়ার সেন্টার পাননি। ফলে ছোট মেয়ে সন্তান নিয়ে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

একজন পুরুষ প্রশিক্ষকও তার কথার সূত্র ধরে বলেছেন, ‘পিটিআইগুলোতে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তারপরও ডে কেয়ার সেন্টার না রাখা হতাশাজনক। এছাড়া নারী সহকর্মীরা নানাভাবে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর অবসান হওয়া জরুরি।’

নারী শিক্ষিকা ও প্রশিক্ষকরা জানিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডে কেয়ার সেন্টার রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পিটিআইতে সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবিলম্বে সব পিটিআইতে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের দাবি তাদের। পাশাপাশি পুরুষ প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে তারা যাতে কোনভাবে নিপীড়ন ও ভোগান্তির শিকার না হন সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবেরা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পিটিআইগুলোতে নারী প্রশিক্ষক ও শিক্ষিকারা তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাচ্চাদের বাসায় রেখে প্রশিক্ষণ নেয়া কঠিন। ডে কেয়ার সেন্টার থাকলে তারা মনোযোগ সহকারে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।’

পটিয়া পিটিআইতে যৌন হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে শিক্ষিকা ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে সচেতনতা থাকতে হবে। তাদের মধ্যে সম্পর্কও ভালো হতে হবে। তবে কেউ হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হলে তার প্রতিবাদ করা উচিৎ।’ প্রশিক্ষকদেরও সতর্ক হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম (অতিরিক্ত সচিব) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট পিটিআইগুলোর সুপার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি আমরা একটি মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সুবিধা অনেক বাড়বে। আর ডে কেয়ারের মতো বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব পরিকল্পনা শাখার।’

চট্টগ্রামের পটিয়া পিটিআইয়ের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে শুনেছি। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুপারও এ ব্যাপারে জানতেন না। তবে তদন্ত হচ্ছে, সেগুলো শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে। আমি মূলত পিটিআইয়ের অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো দেখি। অন্যান্য শাখা এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ