পা দিয়ে লিখেই জিপিএ-৫ পেয়েছে মুক্তামনি
দুটি হাত না থাকার পরও পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিয়ে ছিল ১২ বছরের মুক্তামনি। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সে। বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া মুক্তা।
বিদ্যলয়ে প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নাছিমা খানম বলেছেন, এবার বিদ্যালয় থেকে ১৪ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লিখছে সে। ওর লেখা অন্যদের হাতের লেখার চেয়ে অনেক সুন্দর। একমাত্র মুক্তাই ১৪ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
মুক্তার দুই হাত হারানোর বিষয়ে স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা ঝুমুর বেগমের গার্মেন্টসে চাকরির সূত্রে সাভারে যায় মুক্তা। সেখানে পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদুতিক তার চেপে ধরে মুক্তা। তারপর ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে।
চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় দু’হাতই শরীর থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে হয়। পত্তনীভাঙ্গ গ্রামে দাদী জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন মুক্তামনিকে।
নতুন স্কুলজীবনের শুরু থেকে ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।
ফলাফল পাওয়ার পর মুক্তামনি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে নাছিমা খানম বলেন, রেজাল্ট ভালো করায় মুক্তা ও তার পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। এখন বৃত্তি পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, মুক্তামনির পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পর তার দাদী মারা যায়। এখন সে মায়ের সঙ্গে ঢাকার অবস্থান করছে। সেখানে সাভারের একটি স্কুলেও ভর্তি হয়েছে। মুক্তার চিকিৎসা এবং আরও এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান মা। মুক্তামনির স্বপ্ন সে শিক্ষক হবে।