১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫০

প্রাথমিকে শিক্ষক বদলি পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আসছে

  © ফাইল ফটো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ও হয়রানি বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, প্রাথমিকে শিক্ষক বদলির জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেয়া হবে। বুয়েটের সহায়তায় তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত এ বদলি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে শতভাগ স্বচ্ছ বদলি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সফটওয়্যারের পাশাপাশি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে মন্ত্রণালয়। অবশ্য নতুন পদ্ধতি চালুর আগ পর্যন্ত পুরনো নীতিমালার আলোকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি করা হবে।

জানা গেছে, নীতিমালা ও সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান বাদলের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। কমিটি সফটওয়্যার তৈরির কার্যক্র দেখভাল করছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ভোগান্তিমুক্ত সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ। সফটওয়্যার তৈরিতে বুয়েটের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। তৈরির পর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।’

পূর্ণাঙ্গভাবে প্রয়োগের উপযোগী হলে ২০২০ সালে নতুন নীতিমালার আলোকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বদলি কার্যক্রম শুরু হবে।

সূত্র জানায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষক বদলির জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর মতামত নেয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই বৈঠক হচ্ছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিশেষ প্রয়োজনে বদলি কার্যক্রম বছরজুড়ে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে শিক্ষকদের সাধারণ বদলি কার্যক্রম আগের মতোই রয়েছে। আবেদনে শিক্ষকরা পদায়নের জন্য তিনটি কর্মস্থলের নাম দেবেন। নীতিমালা অনুসারে সফটওয়্যার আবেদনকারীর পদায়নস্থলের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করবে বলে জানা গেছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি কর্মস্থলে শিক্ষককে ন্যূনতম তিন বছর থাকতে হবে। পরেশূন্য থাকা সাপেক্ষে তিনটি বিদ্যালয়ে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। জেলা সদর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকা স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে বদলি হওয়ার সুযোগ থাকবে।

তবে এমন ইস্যুতে চাকরিজীবনে একবারই সুবিধা নেয়া যাবে। উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের বাইরে থেকে সর্বাধিক ১০ শতাংশ শূন্য পদে ওই শহরে বদলি হওয়া যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি শিক্ষকদের হালনাগাদ তালিকা রেজিস্টারে সংরক্ষণ করবেন। তবে বৈবাহিক কারণে বদলির এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

উপজেলার তফসিলভুক্ত দুর্গম এলাকার স্কুলে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের  কমপক্ষে ছয় মাস চাকরি করতে হবে। এমন এলাকায় চাকরির অভিজ্ঞরা বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না এটি।

জানা গেছে, বর্তমানে বদলির জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষকরা আবেদন করেন। আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় আন্তঃবিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনে বদলির জন্য। এতে প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বদলি কার্যক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বড় ধরনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ তৈরি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বদলি নিশ্চিতে অনেক শিক্ষক ক্লাস ফেলে তদবিরে ব্যস্ত হয়ে যান। ভোগান্তির পাশাপাশি তাদের টাকা ঢালতে হয়। জটিল প্রক্রিয়া হওয়ায় দালাল শ্রেণি তৈরি হয়েছে। শিক্ষকনেতাদের কাছেও অনেকে ধরনা দেন। যেতে হয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছেও।

প্রতিবন্ধী শিক্ষক, নদীভাঙন কিংবা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষক বসতভিটা হারালে এবং শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিভাগীয় অথবা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকরা বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, বিবাহ বিচ্ছেদজনিত ঘটনায় মামলা থাকলে একবার এমন সুবিধা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে বদলি, সমন্বয়, পারস্পরিক সমঝোতায়, সংযুক্তি, বিশেষ কারণে সুবিধামতো যে কোনো স্থানে বছরজুড়ে বদলি হওয়া যাবে।