পারিবারিক অর্থায়নে বিদ্যাপীঠ, আদর-যত্নে পড়ছেন শিশুরা
নেত্রকোনা জেলা সদরের বাংলা বাজার সংলগ্ন অবস্থিত দরিদ্র মেধাবী, কোমলমতি শিশুদের মাঝে পারিবারিক অর্থায়নে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বীণা পানি বিদ্যাপীঠ। শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলম, পোষাক বিনামূল্যে প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করে আসছে।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা এবং এনজিও উপদেষ্ঠা অসীম কুমার রায় ২০১১ সালে বীণাপানি বিদ্যাপীঠ স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যাপীঠে নার্সারী থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন।
প্রতি শ্রেণিতে ২০ জন করে ১৪০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। আধাপাকা দুইটি ভবনে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়সহ মোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে। মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এ বিদ্যাপীঠে মন্দির ও নিয়মিত খেলা-ধুরার জন্য খেলার মাঠ রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই বছরের শুরুতে ড্রেস, জুতা, খাতা, কলম, শীতের কম্বল, ছাতা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে। পরীক্ষার ফিস প্রতিষ্ঠান থেকেই দেওয়া হয়। প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাসে দুটি পাক্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নার্সারী থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ম, ২য় স্থান অধিকারীদের মেধাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ বিদ্যাপীঠটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনা করে আসছেন।
প্রতিষ্ঠানে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভাল। পিএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যাপীঠ থেকে ২০১৩ সালে একজন, ২০১৪ সারে চার জন, ২০১৫ সালে চার জন এবং ২০১৬ সালে তিন জন, ২০১৭ সালে পাঁচ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন বৃত্তি পেয়েছে।
বীণাপানি বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষিকা হাফছা আক্তার মনি জানান, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে চলে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অনুরূপ পরিবেশে আরেকটি প্রতিষ্ঠান এলাকায় নেই। যা থেকে ওই শিক্ষার্থী তার পরবর্তী জীবনে উন্নত পরিবেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক আরও নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। পাঠদান, খাতা দেখা, প্রশ্নপত্র তৈরির কাজে প্রচুর শ্রম দিতে হয়। উদীয়মান শিক্ষার্থীদের মেধা ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আরও শ্রেণি বাড়ানো একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।’
শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীণাপানি বিদ্যাপীঠে আরও শ্রেণি বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে এখান থেকে পিএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অনুকূল ও আদর্শ পরিবেশে অর্জন করতে পারে।’
প্রধান শিক্ষক অজিত সিংহ জানান, ‘শিক্ষক যদি নিবেদিত হয়, আত্মপ্রত্যয়ী হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা যেমন আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠে, অপরদিকে বিদ্যালয়ের সুনাম যশ বৃদ্ধি পায়। প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে মূখ্য। এভাবেই সম্ভব একটি আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। সরকারিভাবে প্রত্যেকটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিমূলক মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করি ‘
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অসীম কুমার রায় জানান, ‘শিশু শিক্ষার্থীর ভিত্তি যেন শক্তিশালী হয়। তাহলেই সে ভবিষ্যতে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এলাকা থেকে দরিদ্র শিশুদের মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলাই আমার মূল লক্ষ্য। যাদের অভিভাবকরা মেধা থাকার পরও অর্থ ও উন্নত পরিবেশের অভাবে শিক্ষার্থীদের আদর্শ অর্জন করাতে ব্যর্থ হন সে সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের জন্যই আমার এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার একমাত্র উদ্দেশ্য।’