চালার নিচে পাঠশালা, ঝরে পড়া শিশুদের আনন্দ
- রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
- প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৫০ PM , আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:২৮ PM
মেঝেতে বিছানো ত্রিপাল। ছোট্ট একটা চালাঘর। বই-খাতা নিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন একদল শিশু। তাদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন সুশিক্ষিত কয়েকজন মেধাবী তরুণ-তরুণী। কচিকণ্ঠের পাঠচর্চার মধুর ধ্বনিতে মুখর চারপাশ। এভাবেই চলছে হরিজন শিশুদের কল্যাণে ব্যক্তিগত প্রয়াস।
শুক্রবার গৌরীপুর পৌর শহরের হরিজন শিশুদের অস্থায়ী স্কুলের পাঠদানের চিত্র এটি। স্কুলটি অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “গৌরীপুর হেল্পলাইন”-এর।
স্কুল ঘুরে কথা হয় সংগঠনের অ্যাডমিন ও মডারেটদের সাথে। তাদেরই একজন এইচটি তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান ও গৌরীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে ২০১৯ সালের শুরুতে যাত্রা শুরু করে গৌরীপুর হেল্পলাইন। একদিন সংগঠনের মাসিক সভায় বন্ধু সাদমান প্রস্তাব দেন ঝড়ে পড়া হরিজন শিশুদের পাঠাদানের বিষয়ে। ওর কথায় সায় দেয় অন্যরাও। এরপর নিজেরাই কিছু টাকা সংগ্রহ করে স্কুলশিক্ষা কার্যক্রম চালু করি।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০জন হরিজন শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলশিক্ষা কার্যক্রমের। সপ্তাহের শুক্র ও বুধবার পাঠদান দেয়া হয়। শিক্ষকতার দায়িত্ব হেল্পলাইনের অ্যাডমিন ও মডারেটররাই।
স্কুলের আসবাবপত্র, বেঞ্চ, টেবিল কিছু না থাকায় মেঝেতে ত্রিপাল বিছিয়ে একটি ব্ল্যাকবোর্ডে চলে হরিজন শির্ক্ষার্থীদের পাঠদান। স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত করার জন্য বিনামূল্যে বিস্কুট, খাতা-কলম দেয়া হয় হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম সরকারি বইয়ের ব্যবস্থা করেন।
হেল্পলাইনের অ্যাডমিন মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, নানা সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে পাঠদান করছি। কিন্তু নিজস্ব ঘর না থাকায় পাঠদানে সমস্যা হয়। সরকার কিংবা বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি একটি ঘর করে দেন তাহলে শিক্ষাকার্যক্রম গতিশীল হবে।
স্কুল ঘুরে দেখা গেলো হেল্পলাইনের স্কুলে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তাদের বেশির ভাগ বর্ণবৈষ্যমের শিকার হয়ে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েছে। তাই এখানে পড়াশোনার সুযোগ হওয়ায় তারা আনন্দিত।
শিক্ষার্থী মুন্না বাঁশফোড় বলেন, ঘোষপাড়া স্কুলে পড়তে পোলাপাইনে মেথর কইয়্যা গালি দিতো। বেঞ্চে বইতে দিতো না। তাই ‘ইশকুলে’ যাওয়া ছাইর্যা দিছিলাম। অহন এই ইশকুলে আইয়্যা নাম লিখা শিখছি।
শিক্ষার্থী রূপা বাঁশফোড় বললো, এই ইশকুলে এসে আমি ছড়া শিখছি। নিজের নামও লিখতে পারি। স্যারেরা আমাকে খুব আদর করে।
সংগঠনের মডারেটর মালবিকা সুক্তি বলেন, হরিজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ আছে। কিন্তু আমরা ওদের অক্ষরজ্ঞান শিখাচ্ছি। ওদের এগিয়ে নিতে হলে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি সহযোতিা প্রয়োজন।
ফিরতি পথে কথা হয় সম্প্রদায়ের সর্দার রঙিলা বাঁশফোড়ের সাথে। তিনি বলেন, হেল্পলাইনের স্কুলে শিশুরা পড়াশোনা করতে পারায় আমরা খুশি। কিন্তু আমাদের জন্য আলাদা স্কুল কিংবা অথবা সরকারি স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করলে আমরা আরো খুশি হবো।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন, হরিজন শিশুদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি শিশুকল্যাণ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে।