১৪তম গ্রেডেই সহকারী শিক্ষকরা, আন্দোলন
১১তম গ্রেডে বেতন ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিটি প্রকাশ্যে আসার পর তাদের সে দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা আলোচনা করে আন্দোলনে নামার প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
গত রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাদিয়া শারমিনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বেতন গ্রেড যথাযথ ও সঠিক থাকায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১০ ও সহকারী শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১২-তে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই।
এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গত ২৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। তবে সহকারি শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিলেও পরে তা সত্য বলে নিশ্চিত হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এ নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানোর পাশাপাশি আন্দোলনে নামার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে আমরা চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এটা হতাশাজনক। এ নিয়ে কথা বলতেও ভালো লাগছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে ১১তম গ্রেড দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। সেখানে আমাদের ১৪তম গ্রেডেই রাখার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা সবগুলো সংগঠন শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে বসব। এখন আমাদের সামনে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।’
বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে পাঠদানের কাজ করেন সহকারী শিক্ষকেরা। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা স্কেলে। (কোর্টের রায় অনুসারে যেহেতু বকেয়াও পাবেন)। এছাড়া সহকারী শিক্ষকেরা বেতন পান ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২০০ টাকা স্কেলে।
অবশ্য সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর বের হয়, সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড আর আর প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাব দিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এটি বাস্তবায়ন হলে তা মানবেন না বলে ইতোমধ্যেই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ চিঠির বিষয়টি সামনে আসলো।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ‘শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমূখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষাখাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ১১তম গ্রেডসহ বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তারা যখন আন্দোলন করছিলেন তখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এসব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারেও তাদের দাবি পূরণের বিষয়টি যোগ করা হয়। কিন্তু এখনো সে দাবি মানা হয়নি।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১৩ মে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষক সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠক করেন। সেখানে বেতন বৈষম্য নিরসন, শতভাগ পদোন্নতি, বিদ্যালয়ের সময়সূচি, চিত্তবিনোদন ভাতাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় দাবি মানার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন না করার আহবান জানানো হয়।
তবে এখন ১২তম গ্রেড দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় ফের ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা। তারা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করেছেন। এছাড়া দাবি মানা না হলে বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদাপূর্ণ গ্রেড প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। এটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৪তম গ্রেডের পরিবর্তে ১২তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের পরিবর্তে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
এ প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, শিক্ষকদের নতুন গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে দিতে আদেশ প্রদান করেন। এর আগে সরকারের পরিকল্পনা ছিল প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ঠিক রেখে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১২তমতে উন্নীত করা। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেড পাওয়ায় সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড দেওয়ার দাবি করছেন।