০৬ আগস্ট ২০১৯, ১০:২৮

প্রাথমিকে অবহেলায় ২০০ শিক্ষার্থীর সমাপনী ফল বিপর্যয়

  © ফাইল ফটো

সিলেটে পরীক্ষক, নিরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকের অবহেলায় অন্তত ২০০ কোমলমতি শিক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি গত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পুনঃনিরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলেও প্রাপ্ত নম্বর তাদের মার্কশিটে যোগ করা হয়নি। কম নম্বর দিয়েই তাদের নম্বরপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এসব তথ্য জানা গেছে। এর ফলে ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. বায়োজীদ খান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থীদের কম নম্বর দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক সদর উপজেলার গোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিন্টু রঞ্জন চন্দ, নিরীক্ষক নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিকেতন দাস ও প্রধান পরীক্ষক মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়া রানী পালের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

বর্তমানে নেত্রকোনায় কর্মরত তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লা পুনঃনিরীক্ষায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নম্বর সংযোজন না করে পূর্বের অবস্থায় রেখে নম্বর ফর্দ অধিদফতরে পাঠিয়েছেন। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওবায়দুল্লাও একটি তদন্ত প্রতিবেদন মহাপরিচালকের কাছে দিয়েছেন।

জানা গেছে, এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষা অধিদফতরে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েই হাত গুটিয়ে বসে আছে। অথচ বিধান অনুযায়ী তাদেরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।

জালালাবাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রবীন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আমার ছেলে প্রত্যেক বিষয়ে ৯০-এর ওপর পেয়েছে। এমনকি ইংরেজিতে ৯৫ অংকে ৯৮ পেয়েছে। অথচ হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ৭০ নম্বর পেয়েছে। পুনঃনিরীক্ষণেও দায়সারাভাবে খাতা দেখার পরও সে ৮০ পেয়েছে। তবুও এই নম্বরগুলো যুক্ত করা হয়নি। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি ন্যায়বিচার চাই।’

শিক্ষা অধিদফতরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম। তারা দায়িত্ব পালন না করে শুধু অধিদফতরে কেন রিপোর্ট পাঠাবে? কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যারা মার্কস কম দিয়েছে তারা শুধু অন্যায় করেনি, এটি একটি মোটা দাগের অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০ ছাত্রের খাতা দেখার ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা, গাফিলতি, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কর্তৃক প্রদত্ত মার্কিং স্কিম অনুসরণ না করা এবং দায়সারাভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে।

পরীক্ষক মিন্টু রঞ্জন চন্দ উত্তরপত্র মূল্যায়নে তার গাফিলতি স্বীকার করে জানান, প্রশ্নপত্রের গায়ে দেয়া প্রদত্ত নম্বর সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিলেন না! উত্তরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন বিকাল ৪টায় পরীক্ষক উত্তরপত্র দেয়ায় নিরীক্ষক নিকেতন দাসের পক্ষে ২০০টি উত্তরপত্র যথাযথভাবে নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

প্রধান পরীক্ষক নিকেতন দাস নিরীক্ষকের মতো একই বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু সময় কম থাকলেও প্রধান পরীক্ষক ২০০টি উত্তরপত্রের ৫ শতাংশ মূল্যায়ন করা উচিত ছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. বায়োজিদ খান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, আগের ডিপিও থাকাকালীন সময়ে এসব হয়েছে। তবে আমার নজরে আসার পর আমি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মন্জুর কাদির বলেন, দায়িত্ব ‘পালনে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ডিপিও ব্যবস্থা নেয়ার কথা, কিন্তু তারা কাজ না করে পাস কাটিয়ে যাচ্ছে। এটা কেন করছে বুঝতে পারছি না। যারা ভাসা ভাসা প্রতিবেদন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে এতবড় অবহেলা- শিশুরা প্রথম জীবনে ধাক্কা খেলে সারা জীবন এই ক্ষত নিয়ে ঘুরতে হবে।’