১৩ বছর ধরে চাকরি করেও বেতন পাই না
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০২:৫০ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০৭:০৪ PM
ছবিতে মিষ্টি হাসির যে শিশুটিকে দেখছেন তার নাম অয়ন। গত ২৪ দিন ধরে অয়ন তার মার সাথে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারীকরণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। এমন অনেক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের দেখা মিলছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় শ’পাঁচেক শিক্ষক প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন। কেউ দাড়িয়ে, কেউ আবার রাস্তায় বসে তাদের দাবির কথা বলছেন। প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতের উপর পাটি বিছিয়ে সেখানেই অনেকে শুয়ে আছেন। বৃষ্টিতে পাটিগুলো ভিজে গেছে।
ছোট্ট অয়ন তার মা অঙ্কুজ দাস এর সাথে রাস্তায় বসে আছে। অয়ন কখনো হাসছে আবার প্রচণ্ড কান্না করে উঠছে। প্রচণ্ড গরম আর বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। তার মা অঙ্কুজের অবস্থাও নাজেহাল।
অঙ্কুজ দাসের বাড়ি নোয়াখলীর হাতিয়া উপজেলার নলচিরায়। ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন নলচিরার আল আমিন বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ১৩ বছরে স্কুল থেকে একটি টাকাও পাননি তিনি। পরিবারে ৩ মেয়ে আর একটি ছেলে। অয়ন সবার ছোট। অঙ্কুজের স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন।
গত ১৬ জুন থেকে বাদপড়া চার হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের দাবিতে ‘বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির’ ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করেছেন শিক্ষকরা। ২৪ দিনের আন্দোলনে মোট ১৯০ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন অনশনরত শিক্ষকরা। অঙ্কুজ দাস তাদেরই একজন।
অঙ্কুজ দাস বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা। উনি আমাদের দু:খ বুঝবেন। উনি আমাদের সমস্যা বুঝবেন। আমাদের সমস্যার যদি সমাধান না হয় তাহলে মরণ ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। আমার নিজের জন্য কোন চিন্তা হয়না। আমার ভাবনা শুধু আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে। আমি ছাড়া তাদের দেখার কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি থেকে আসার পর আমার বড় মেয়ে আমাকে কল দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করে মা তুমি কবে আসবে? আমি তখন কিছু বলতে পারিনা। আমাদের বিষয়ে কেউ কর্ণপাত করছে না। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ১৩ বছর ধরে চাকরি করেও বেতন পাইনা। মেয়েগুলোকে কখনো কিছু কিনে দিতে পারিনা। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।
জানা গেছে তৃতীয় দফায় সরকারীকরণের প্রক্রিয়ার সময় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত করায় প্রায় ৪ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা।
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনর রশিদ খোকন জানান, চার হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের দাবিতে ২৪ দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছি। আমরা বুধবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছি। এতে এখন পর্যন্ত ৪০ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর ২৪ দিনের অবস্থানে মোট ১৯০জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। ৪ হাজার ১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের ঘোষণা দেয়া না পর্যন্ত শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে সরকারীকরণ করা হয়। এই ধাপে ৪ হাজার ১৫৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ থেকে বাদ পড়ে যায়। বাদ পড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো সরকারীকরণের দাবিতে গত ১৬ জুন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন শিক্ষকরা। গত ৩ জুলাই থেকে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করছেন।