প্রাথমিকে নিয়োগ: বুদ্ধি খাটিয়েও এমসিকিউ পাস সম্ভব!

যারা আগে পড়েননি, তাদের জন্য সব পড়া সম্ভব নয়। কিংবা যারা পড়েছেন; তাদের পক্ষেও সব রিভিসন দেওয়া কঠিন। সুতরাং কী পড়বেন এবং কী পড়বেন না- সেটি জানাই বেশি জরুরি। তাছাড়া স্বল্প এ সময়ে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন? শুধুমাত্র মুখস্ত করে প্রিলি পাস করে আসবেন এটা সবার জন্য হয় না। বুদ্ধি খাটান; তবে মনে রাখবেন প্রাথমিকের প্রিলিতে আপনি ভুল দাগালে কিন্তু মার্ক কাঁটা যাবে। আর এই বুদ্ধিটা হলো ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’। অর্থ্যাৎ আপনাকে বুঝতে হবে প্রশ্ন সহজ না কঠিন। যদি প্রশ্ন কঠিন হয়, তবে পাস মার্ক ৫০ হলেই যথেষ্ট। আবার প্রশ্ন যদি সহজ হয়, তখন এই পাস মার্ক ৬০+ হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ পরীক্ষার এক ঘন্টার মধ্যেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কত হলে পাস হবে এবং এজন্য কতগুলো দাগাবেন?

পাশাপাশি যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে, ভুল দাগালে যেহেতু মার্ক কাটা যাবে, তাই বেশি দাগিয়ে ভুলের সংখ্যা বাড়াবেন না। সহজ কথা বলতে গেলে পুরো প্রক্রিয়াটি হলো- আপনাকে যেমন বেশি দাগাতে হবে, তেমনি ভুলের পরিমাণও যেন কম হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আবার ভুলের কারণে যেন সঠিক উত্তরের মার্ক বেশি কাটা না পড়ে, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এটাই ক্যালকুলেটেড রিস্ক। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কম প্রস্তুতিতেও প্রাথমিক নিয়োগের প্রিলি পাস সম্ভব। আবার এটা জানা না থাকলে খুব ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে ফেল করতে পারেন। তাই সাবধান।

আরেকটা কথা, এই মার্ক যেহেতু আপনার মূল মার্কের সাথে যোগ হবে না, সুতরাং এখানে উতরে যাবার জন্য আপনাকে দুনিয়ার সব কিছুই পারতে/ জানতে হবে না। প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা হতে আর মাত্র ৩ দিন। লিখিত পরীক্ষা পাস করতে হলে এই মুহুর্তে পড়ার চেয়ে কী পড়বেন না কিংবা সব বাদ দিয়ে কয়টা টপিক পড়বেন- সেই বুদ্ধিটা জানাই বেশি জরুরি।  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র প্রতিবেদনে তারই ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।

একজন লিখেছেন, প্রথমেই প্রশ্ন বিক্রেতা ও প্রশ্ন ফাঁসের কথা ভুলে যান। বিশ্বাস করুন, ৩য় ধাপের মত ৪র্থ ধাপে কোন প্রশ্ন ফাঁস হবে না। কেউ প্রশ্ন বিক্রেতা সাজলে নিশ্চিত সে প্রতারক। শুধু আপনার মন মেজাজ ও টাকা হারাবেন। বিনিময়ে কিছুই পাবেন না। সব গুছিয়ে নিন। এসএমএস না আসলেও আপনি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে এডমিট কার্ড তুলতে পারবেন। সুন্দর করে গুছিয়ে নিন। সহজে বৃত্ত ভরাট করা যায় (মোটা কালির), এমন একটা কলম ব্যবহার করুন।

ফাইনাল সাজেশন: এখন যা পড়বেন তা  ১০০% অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিকস। রিভিশন দিতেই হবে

★বাংলা★
✍ ধবনি ও বর্ণ, বাক্য, সন্ধি, সমাস, উপসর্গ-অনুসর্গ, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, কারক ও বিভক্তি, এক কথায় প্রকাশ , বাগধারা (শুধু এইগুলো দেখে যান)। মনে রাখবেন, জাস্ট চোখ বুলিয়ে যাবেন। এতে পরীক্ষার হলে কনফিউশন থেকে বাঁচবেন।

★ইংরেজি★
নো ডিটেইল।
✍ এক নজর দেখুন - The Noun & Pronoun
✍ এক নজর দেখুন - The Adjective and Adverb
✍ এক নজর দেখুন - Right Form of Verb
✍ এক নজর দেখুন - Sentence
✍ এক নজর দেখুন - Conditional Sentence
✍ এক নজর দেখুন - Voice Change
✍ এক নজর দেখুন - Narration
✍ এক নজর দেখুন - Subject Verb Agreement

[এই সময় বাদ দিন -Spelling, Vocabulary, Prepositions . তবুও যদি ইচ্ছে করে তাহলে শুধু Prepositions অংশগুলো দেখুন। ]

★ম্যাথ★
আগে যা করেছেন তাই । এখন আর সময় নেই পুরো দেখার । যা দেখতে হবে এক নজর তার লিস্ট দেয়া হলো। 
✍ এক নজর দেখুন - বীজগণিতের সূত্র ( শুরুই সূত্রগুলো বুঝে নিন )
✍ এক নজর দেখুন - মুনাফা বা সুদের সূত্র
✍ এক নজর দেখুন - কোণ ও ত্রিভুজের ( বিভিন্ন সংজ্ঞা, কোন টপিকসের জন্য কত ডিগ্রী )
✍ এক নজর দেখুন - বৃত্তের রুল ও কোণ নিয়ে কিছু ট্রিকস
✍ এক নজর দেখুন - ধারা সূত্রগুলো দেখুন

[ আর কিছুই দেখার সময় নেই। পড়ার জন্য সময় আছে খুব বেশি হলেও ২০ ঘণ্টা ]

★বাংলাদেশ★
আগের পড়া অংশের উপর চোখ বুলিয়ে যাবেন। ভাববেন আপনার সব পড়া। এখন শুধু দেখে যাচ্ছি। বিশ্বাস করুন, চ্যালেঞ্জ করুন, আপনি বহু কনফিউশন থেকে বেঁচে যাবেন।
✍ এক নজর দেখুন - মুক্তিযুদ্ধ ( ১৯৭১ )
✍ এক নজর দেখুন - বাংলাদেশের অবস্থান-ভূ-প্রকৃতি-জলবায়ু
✍ এক নজর দেখুন - জাতীয় দিবস, পতাকা, প্রতিক
✍ এক নজর দেখুন - ঐতিহাসিক স্থাপনা, ভাস্কর্য, স্থাপনা
✍ এক নজর দেখুন - সংবিধান
✍ এক নজর দেখুন - নদ-নদী-বিল-হাওড়-সমুদ্র-লেক- দ্বীপ।
✍ এক নজর দেখুন - সমীক্ষা, বাজেট, আদমশুমারি

★আন্তর্জাতিক★
✍ এক নজর দেখুন - জাতিসংঘ
✍ এক নজর দেখুন - এশিয়া মহাদেশ
✍ এক নজর দেখুন - ২য় বিশ্বযুদ্ধ
✍ এক নজর দেখুন - প্রণালী-সীমারেখা- বিরোধপূর্ণ স্থান

★বিজ্ঞান★
আগে যা পড়েছেন তাই পর্যাপ্ত। ১-২টি প্রশ্ন আসবে। এ জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না।

★কম্পিউটার★
আগে যা পড়েছেন তাই পর্যাপ্ত। এ জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না।

উপরোক্ত সাজেশনদাতা লিখেছেন, সম্পূর্ণ সাজেশন নেওয়া হয়েছে ‘প্রাইমারি_Power_Model_Test’ বই থেকে। তার মতে, বইটিতে আছে বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণের আলোকে পরীক্ষাতে আসার মত অতি গুরুত্বপূর্ণ ৪০০০ প্রশ্ন এবং সাম্প্রতিক, সমীক্ষা বাজেট ও আদমশুমারি। মডেল টেস্ট বইটি শেষ মুহূর্তে আপনার সকল চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। শেষ সময়ে ভাল ও মানসম্মত মডেল টেস্ট বই ছাড়া আপনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হবে না।

পরীক্ষা পদ্ধতি ও মানবন্টন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমে নেওয়া হয় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর যোগ হবে। প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় ৮০ মিনিট বা ১ ঘন্টা ২০ মিনিট। গড়ে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১ মিনিট সময় পাওয়া যাবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। এ ধাপে থাকে ২০ নম্বর। ভাইভায় টিকলে পরবর্তী যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় থাকবে ২০ নম্বর। একাডেমিক ফলাফল বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর থাকবে ৫ নম্বর। এক্সট্রা কারিকুলাম (নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি) এর ওপর বরাদ্দ থাকবে ৫ নম্বর।বাকি ১০ নম্বর থাকবে সাধারণ জ্ঞানের ওপর। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রার্থীর নিজ জেলার থানা বা উপজেলার আয়তন, জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, জেলার ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।

আবারও বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র আপনি মুখস্ত করে প্রিলি পাস করে আসবেন এটা সবার জন্য হয় না। বুদ্ধি খাটান; তবে মনে রাখবেন প্রাথমিকের প্রিলিতে আপনি ভুল দাগালে কিন্তু মার্ক কাঁটা যাবে, সুতরাং ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে হবে। আরেকটা কথা, এই মার্ক যেহেতু আপনার মূল মার্কের সাথে যোগ হবে না, সুতরাং এখানে উতরে যাবার জন্য আপনাকে দুনিয়ার সব কিছুই পারতে/ জানতে হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ