২৩ জুন ২০১৯, ১১:২৬

প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরীক্ষার নেপথ্য কারণ জানিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার স্ট্যাটাস

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই পর্যায়ের পরীক্ষা। শুধু প্রশ্ন ফাঁস নয়, বড় কোন অনিয়ম ছাড়াই সম্প্ন হয়েছে ২১ জুনের নিয়োগ পরীক্ষা। প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের জীবন গড়তে যে পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় অনিয়ম কোনভাবেই কাম্য ছিল না। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের পরিশ্রমের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে অভিমত দেন তারা।

সুষ্ঠু ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নেপথ্যের কারণ জানিয়েছেন প্রাথমিক সংশ্লিষ্ট এক বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, সবার ঘুমহীন অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ‘প্রশ্ন ছাপা থেকে শুরু করে পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পৌঁছানো পর্যন্ত ডিসি মহোদয় অফিসের কোন স্টাফের সংষ্পর্শে আসেনি। শুধু প্রেসের উপরে বর্ণিত অফিসারগণ এবং প্রেসের লোকবল দায়িত্বে ছিল। প্রেসে অবস্থানকালীন ও তা সীলগালা করা পর্যন্ত শুধু ডিসি স্যার এবং ডিপিইও মহোদয়ের ফোন সচল ছিল, বাকীদের মোবাইল সংরক্ষিত ছিল। প্রেসের লোকজন পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের জিম্মায় ছিল।’ এসব কারণেই অনিয়মহীন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরো লিখেন, ‘তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য ডিসি, দু’জন এডিসি, ৪ জন এক্সকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ডিপিইও, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, পুলিশ ফোর্স (পুলিশের অবশ্য রোটেশনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে) ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা নেয়ার জন্য আগের দিন বিকাল ৩টা পরদিন ৩টার পরও পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি (প্রেস টু পরীক্ষা কেন্দ্র টু উত্তরপত্র জমাদান)। এর মধ্যে কারো কোন ঘুম ছিল না। এতো কিছুর মধ্যেও যদি কোন অঘটন ঘটেই যায়, সেটা দুর্ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হওয়া যুক্তিসঙ্গত।’

তিনি বলেন, এতো পরিশ্রমের বিনিময়ে আমাদেরকে হাজার হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হয় না। এ ধরণের আমাদের অহরহই করতে হয় নামকাওয়াস্তে সম্মানী নিয়ে। মূলত এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে করি। কষ্ট লাগে কেউ যখন পুরোটা না জেনে কিছু লেখে দেয়। দয়া করে যতদূর সম্ভব জানা যায়, সেটা জেনে সেন্সিটিভ ইস্যু নিয়ে লেখলে আমাদের সকলের জন্যই মঙ্গল হবে বলে মনে করি।

জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম দফায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর পরবর্তী ধাপে প্রশ্ন ফাঁস রোধে চার ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে নিজ জেলার প্রশ্নপত্র ব্যবস্থাপনায় কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। অভিন্ন প্রশ্নের সেট দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। ২ বা ৩টি জেলায় একটি অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ২৬টি জেলায় অভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থী মুখ বা কান ঢেকে প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষার দিন সকল কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছিল। মূলত এসব কারণেই ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রাথমিক অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে অবশ্য নিয়োগের প্রথম ধাপে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ৫ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠে দ্বিতীয় ধাপেও। ওই ধাপে পটুয়াখালী থেকে ৩৩ জনকে আটক করে পুলিশ। ওই ধাপে পটুয়াখালী থেকে ৩৩ জনকে আটক করে পুলিশ। আজ তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই একই অভিযোগ উঠালেও যুক্তি-প্রমাণে তা হালে পানি পায়নি।

প্রসঙ্গত, সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার ২৪ লাখ এক হাজার ৯১৯ জন প্রার্থী প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ লিখিত পরীক্ষার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে গত ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে ও আজ তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।