প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে, পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা!

কেউ যদি প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ দিতে পারে তাহলে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হবে। বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগ নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। শুধু বক্তব্য নয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চারটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে এসব তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই সংশ্লিষ্টরা নিজ নিজ জেলার প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। তার ভিত্তিতেই অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলা হবে।

প্রাথমিক কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নফাঁস রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রতিমন্ত্রী। যেহেতু প্রথম দুটি পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই সঠিক প্রমাণ পাওয়া গেলে তিনিও পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে আন্তরিক। সূত্রের তথ্য, সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো। এজন্য কেন্দ্রগুলো থেকে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ফেসবুকও মনিটরিং করছেন না। নজরে আনছেন প্রশ্নফাঁস নিয়ে সক্রিয় ব্যক্তিগত বেশ কয়েকটি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট এমনটি গ্রুপ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসসংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় ফৌজদারি আইনে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলাগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। পাশাপাশি যে চার জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে, সেসব জেলার প্রাথমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই মাসের শেষের দিকে তদন্ত প্রতিবেদন ডিপিইতে পাঠানোর কথা রয়েছে। পরে সেটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

তথ্যমতে, প্রাথমিক নিয়োগের প্রথম ধাপে প্রশ্নফাঁস চক্রের ৫ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠে দ্বিতীয় ধাপেও। ওই ধাপে পটুয়াখালী থেকে ৩৩ জনকে আটক করে পুলিশ। সবশেষ তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাতেও একটি অসাধু চক্র সেই অভিযোগ তুললেও তা হালে পানি পায়নি। বরং ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা হয়ে এটি।

তবে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম দফায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর পরবর্তী ধাপে প্রশ্ন ফাঁস রোধে চার ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যো ছিল নিজ জেলার প্রশ্নপত্র ব্যবস্থাপনায় কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। অভিন্ন প্রশ্নের সেট দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। ২ বা ৩টি জেলায় একটি অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এছাড়া কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থী মুখ বা কান ঢেকে প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষার দিন সকল কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছিল। মূলত সে কারণেই তৃতীয় ধাপের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। আগামী ধাপেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে।

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রথম ধাপের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ধাপের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যাবে, ওই ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার দুর্নীতি বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার ২৪ লাখ এক হাজার ৯১৯ জন প্রার্থী প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ লিখিত পরীক্ষার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে গত ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে ও আজ তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ