১২ মে ২০১৯, ০১:৪১

সরকারি স্কুলে নার্সারি শ্রেণি শুরু হচ্ছে আগামী বছর

  © সংগৃহীত

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির আগে নার্সারি শ্রেণি চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রাণয়। শিশুদের কিন্ডার গার্টেন (কেজি) স্কুল বিমুখ করা এবং ৪ বছর বয়সী সব শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির জন্যই এ ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের নানা প্রান্তে কেজি স্কুলের রমরমার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ঝিমিয়ে পড়ছে। শিশুরা ৫ বছর বয়সী না হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। অথচ ৩ বছর বয়সেই কেজি স্কুলে ভর্তি হওয়া যায়। এতে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়স ৪ বছর করার জন্য বলেছেন।

তবে এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিয়ম যা আছে, তা-ই থাকবে। শুধু নার্সারি নামে আরেকটি শ্রেণি যুক্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে একটি শিশু ৪ বছর বয়সে প্রথমে নার্সারি, ৫ বছর বয়সে শিশু শ্রেণি এবং ৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে। এর ফলে শিশুরা কেজি স্কুলে যেতে নিরুৎসাহিত হবে। আইন করে আর কেজি স্কুলের লাগাম টানতে হবে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশেই, বিশেষত শহরাঞ্চল ও মহানগরগুলোয় চাহিদার তুলনায় মানসম্মত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে যত্রতত্র কেজি স্কুল চালু হয়েছে। বাসস্থানের নিকটবর্তী হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কারণে অনেক অভিভাবকই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্তানকে এসব স্কুলে ভর্তি করান। কেজি স্কুলের শিক্ষা বিষয়ে সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভিত্তিতে এবং ব্যক্তিবিশেষের মর্জিমাফিক এসব স্কুল পরিচালিত হয়। কিন্ডার গার্টেন শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ার আগে একটি শিশুকে প্লে, নার্সারি ও কেজি- এ তিনটি শ্রেণিতে মোট তিন বছর কাটাতে হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মোটা অঙ্কের ভর্তি ফিসহ নানা ধরনের চার্জ পরিশোধ করে প্রতিবছর নতুনভাবে ভর্তি হতে হয়।

অনুমোদনহীন কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসব স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সমন্বয়ে ৫৫৯টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এসব টিমের বেশকিছু প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, কোন জেলায় কতটি স্কুল আছে, সে তথ্য অনেক ডিসি উল্লেখ করেননি। অনেক ডিসি দাবি করেছেন, তার জেলায় এ ধরনের স্কুল নেই। টাস্কফোর্সের কাছে স্কুলের বৈধতা যাচাই ও চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা জানতে চাইলেও তা উল্লেখ করা হয়নি। স্কুলের ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী ভর্তি, ফি নির্ধারণ ও আদায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, অবকাঠামো সুবিধাসহ নানা বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি। স্কুলে কী ধরনের পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়, কারা স্কুল পরিচালনা করছেন, অর্থের উৎস কী, আদায় করা অর্থ কোথায় ব্যয় হয়, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান মানা হয় কি না, এসব বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। ডিসিদের পাঠানো এসব প্রতিবেদন ‘দায়সারা’- এমন মন্তব্য করে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, করণীয় সম্পর্কেও সুস্পষ্ট মতামত দেননি তারা। এ কারণে অবৈধ স্কুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অধিকাংশ কেজি স্কুল অবৈধ। সীমাহীন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯৬২ সালের স্কুল নিবন্ধন আইনের আলোকে ২০১১ সালে একটি বিধিমালা করে। ওই বিধিমালায় কেজি স্কুল পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, টিউশন ফি নির্ধারণ, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা ও নিয়োগ, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক, তহবিল পরিচালনা, বিদ্যালয়ের ভূমির পরিমাণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়। এতে সংরক্ষিত তহবিল, নিবন্ধন ফি, অস্থায়ী নিবন্ধন ফি, প্রাথমিক আবেদন ফি ইত্যাদিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপন জারির ঠিক এক বছরের মাথায় সেই ফির হার প্রায় অর্ধেক কমিয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অর্থাৎ একটি বিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিল মহানগর এলাকার জন্য যেখানে এক লাখ টাকা ছিল, সেখানে তা ৫০ হাজার টাকা করা হয়। কেজি স্কুলের মালিকদের চাপে সরকার এ সংশোধনী আনতে বাধ্য হয়। ওই বিধিমালার আওতায় ৬১৬টি স্কুল নিবন্ধিত হয়। আরো ৭৫১টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অথচ কেজি স্কুলের বিভিন্ন সমিতির তথ্য মতে, সারা দেশে এ ধরনের অন্তত ৫০ হাজার স্কুল রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগে আরও দুটি শ্রেণি চালু করা হবে। এর নাম কী হবে এবং এর কারিকুলাম তৈরির জন্য প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন বলে জানান থমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব।