১১তম গ্রেড: মানববন্ধন ১৪ মার্চ, এরপরই বৃহত্তর আন্দোলন
ক্ষোভে ফুঁসছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষকরা। সদ্য অনুমোদিত বিধিমালায় বেতন প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপ তথা ১১তম গ্রেড না দেয়ায় বৃহত্তর আন্দোলনে যাচ্ছে জাতি গড়ার এই কারিগররা। আন্দোলনে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। এর আগে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ১১ মার্চ সারাদেশে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে (১৩ মার্চ ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসলে ১৪ মার্চ সারাদেশে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। এছাড়াও ওইদিন শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ও সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেবেন তারা। এরপরও দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, ‘গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য নিরসন করার জন্য যে আন্দোলন করা হচ্ছে তার সুরাহা হবে না; বরং বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। আগে দুই হাজার ৩০০ টাকার মতো বেতনের পার্থক্য থাকলেও এটি বাস্তবায়ন হলে তা হয়ে যাবে চার হাজার ৭০০ টাকা। সবমিলিয়ে ৭-৮ হাজার টাকার বেতন বৈষম্য হবে।’
১০তম ও ১২তম গ্রেডে বেমন দেওয়া হলে তা সহকারী শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক হবে দাবি করে শিক্ষক নেতা শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘এতে অনেক শিক্ষকের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা সার্বিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে। এজন্য আমরা বেতন বৃদ্ধি চাই না বৈষম্যের অবসান চাই।’
প্রায় চার বছর ধরে ধাপে ধাপে আন্দোলন করে আসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বৈষম্য নিরসনে ২০১৭ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। সরকার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করা হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামীলীগের ইশতেহারেও এ বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তার বাস্তবায়ন হয়নি।
মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এ আন্দোলন করছি। বেতনে যে বৈষম্য রয়েছে তা অবশ্যই দূরীকরণ করাটা যুক্তিযুক্ত। এ আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদেরকে শোকজ ও হামলা-মামলার শিকারও হতে হয়েছে। তারপর অবশ্য সরকার এ বিষয়ে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন।’ এখন দ্রুত এ বৈষম্য নিরসন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এদিকে বেতন বৈষমস্য দূর করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক মহাজোট। দাবিগুলো হচ্ছে- ৯মার্চ তথা কাল থেকেই সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন পুনঃনির্ধারণ, নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে পুরুষ ও মহিলা- উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রী নির্ধারণ, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে সহাকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতির ব্যবস্থা এবং সিএনডি/ডিপিএড ও বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারণ। প্রাথমিকে মানুষ গড়ার কারিগর তথা সহাকারী শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে এই দাবিগুলো কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সে সময়ও দাবি ছিল, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন স্কেল নির্ধারণ। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যাগে আয়োজিত ওই অনশন কর্মসূচিতে জোটের অধীনে থাকা ১০টি সংগঠনের শিক্ষকরা অংশ নিয়েছিলেন।
অনশনে জোটের নেতারা বলছিলেন, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে তাদের বেতন দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। পরে অবশ্য সরকারের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার হয়। কিন্তু সদ্য খসড়া অনুমোদন দেয়ার কার্যত সেই অনশনও বৃথা গেলো বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা।
এর আগে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সহকারী শিক্ষকরা। বিধিমালার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া, ঝালকাঠী, নীলফামারী, নড়াইল, পাবনা, পঞ্চগড়, নোয়াখালী, খুলনা, যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেট, পটুুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। হুশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভ ও অনশনে কর্মসূচির।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের এই পরিবর্তনে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
আরো পড়ুন:চলতি মাসেই ১১তম চায় প্রাথমিকের শিক্ষকরা
প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১২ তম গ্রেডে (১১৩০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১তম গ্রেডে (১২৫০০ টাকা বেতন স্কেল)। আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক ১৫ তম গ্রেডে (৯৭০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে (১০২০০ টাকা বেতন স্কেল) বেতন পান।