চলতি মাসেই ১১তম চায় প্রাথমিকের শিক্ষকরা, আসছে কর্মসূচি
ক’দিন আগেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো ও বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। প্রতিমন্ত্রীর বেতন বাড়ানোর সেই ঘোষণা কার্যকর হয়েছে বটে; কিন্তু বৈষম্য নিরসন ও সহকারী শিক্ষকদের আত্মসম্মান রক্ষার দাবি অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলছেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য তিন ধাপ। আমাদের দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড। প্রধান শিক্ষকরা ১১ তম গ্রেড হলে আমাদের দাবি ১২ তম। আর প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে পৌঁছলে আমাদের ১১তম গ্রেড দিতে হবে। কিন্তু খসড় বিধিমালায় সেই দাবির প্রতিফলন নেই। স্বভাবতই নতুন পন্থা খুঁজতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষক নেতা জানান, প্রাথমিকভাবে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে। যদি তাতে কাজ না হয়, তবে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা শহীদ মিনার কিংবা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও স্বল্প পরিসরে অনশন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সুতরাং আন্দোলনের ডাক দিতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। বেতন হয়ত বাড়ছে, কিন্তু সরকারি শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডে বৈষম্য রয়েই গেল। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। চলতি মাস থেকেই বিষয়টির সুরাহা দাবি করেছেন তারা।
তথ্যমতে, সরকারের গত মেয়াদের শেষ দিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষমস্য কমানোর জোর উদ্যোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়। সে সময় শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, নতুন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষকদের বৈষম্যই শুধুই কমছে না। মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে গ্রেড বৈষম্য রয়েছে তাও কমবে। কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির অনুমোদিত খসড়া বিধিমায় তার প্রতিফলন হয়নি।
বৈষম্য নিরসনে চার দফা দাবি
এদিকে বেতন বৈষমস্য দূর করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক মহাজোট। দাবিগুলো হচ্ছে- ৯মার্চ তথা কাল থেকেই সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন পুনঃনির্ধারণ, নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে পুরুষ ও মহিলা- উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রী নির্ধারণ, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে সহাকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতির ব্যবস্থা এবং সিএনডি/ডিপিএড ও বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারণ। প্রাথমিকে মানুষ গড়ার কারিগর তথা সহাকারী শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে এই দাবিগুলো কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সে সময়ও দাবি ছিল, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন স্কেল নির্ধারণ। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যাগে আয়োজিত ওই অনশন কর্মসূচিতে জোটের অধীনে থাকা ১০টি সংগঠনের শিক্ষকরা অংশ নিয়েছিলেন।
অনশনে জোটের নেতারা বলছিলেন, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে তাদের বেতন দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। পরে অবশ্য সরকারের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার হয়। কিন্তু সদ্য খসড়া অনুমোদন দেয়ার কার্যত সেই অনশনও বৃথা গেলো বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা।
দেশজুড়ে মানববন্ধন, হুশিয়ারি উচ্চারণ
এদিকে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সহকারী শিক্ষকরা। বিধিমালার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া, ঝালকাঠী, নীলফামারী, নড়াইল, পাবনা, পঞ্চগড়, নোয়াখালী, খুলনা, যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেট, পটুুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। হুশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভ ও অনশনে কর্মসূচির।
মানববন্ধনকালে শিক্ষকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষকের পরেই তাদের বেতন রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, বিষয়টি আত্মসম্মানেরও। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে, প্রধান শিক্ষকের পর সহকারী শিক্ষকদের বেতন হবে। কিন্তু তা না করে একধাপ পেছনে দেয়ার আত্মসম্মানে আঘাত দেয়া হয়েছে। সংশোধন হতে যাওয়া গেজেটে ১১ গ্রেড প্রদান না করা হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের এই পরিবর্তনে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১২ তম গ্রেডে (১১৩০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১তম গ্রেডে (১২৫০০ টাকা বেতন স্কেল)। আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক ১৫ তম গ্রেডে (৯৭০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে (১০২০০ টাকা বেতন স্কেল) বেতন পান।