বিনামূল্যের পাঠ্যবই বাজারে
২০১০ থেকে ২০১৯ সাল। এই ১০ বছরে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করেছে সরকার। চলতি বছরও বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে সরকার। স্কুলে ভর্তির হার শতভাগ এবং ঝরে পড়ার হার কমানোর জন্য সরকার যুগান্তরকারী এ সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু সপ্তাহ না পেরোতেই বিনামূল্যের এসব বই চলে এসেছে বাজারে। এসব বই বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের মার্কেটে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতেও বিনামূল্যের বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। আর সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ ব্যাপারে কিছু জানেনা।
রাজধানীর নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এসব বই বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বইয়ের একটি অংশ আসে যাত্রাবাড়ী এলাকার মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা কিছু বই অতিরিক্ত ছাপায়। আরেকটি অংশ আসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা শিক্ষকদের সাথে সিন্ডিকেটের যোগ সাজশে এসব বই বিক্রি করা হয়। তাছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেও এসব বই সংগ্রহ করা হয় বলে জানান তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাংলা বাজারের পোস্ট অফিস সংলগ্ন ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে বিনামূল্যের এসব বই। ব্যবসায়ীরা জানায় স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব বই বিক্রি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বাজারের এক বই ব্যবসায়ী বলেন, এসব বইয়ের বেশিরভাগই আসে পুস্তক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা সরকারকে বই দেয় ঠিকই, কিন্তু নিজেরাও এসব বই বেশি করে ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ে।
সেলিম নামের বাংলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আসলে এই বইগুলোতো বিক্রির জন্য নয়। তাই সব জায়গায় পাওয়া যায় না। কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমরা বইগুলো সংগ্রহ করি। চাহিদা অনুযায়ী আমরা তাদের কাছ থেকে বই এনে বিক্রি করি। সব সময় সব বই তাদের কাছে পাওয়া যায় না।
শাহীন বুক হাউজের মালিক শাহীন জানান, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বোর্ডের সব বই তার কাছে আছে। তিনি গড়ে ২০ টাকায় পাইকারী দিতে পারবেন। আর ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বই গড়ে ৩০ টাকা করে পাইকারী বিক্রি করেন।
শুধু রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকান নয়, বাংলা বাজারের স্থায়ী বইয়ের দোকানগুলোতে খোঁজ নিলে সেখান থেকেও জানানো হয় বোর্ডের সব শ্রেণীরই বই পাওয়া সম্ভব। দোকানদাররা জানান, বইগুলো বাইরে থেকে এনে দিতে হবে। তবে বাইরে কোথায় বইগুলো বিক্রি করা হয় জানতে চাইলে সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি তাদের (ব্যবসায়ী) কাছ থেকে।
একই অবস্থা রাজধানীর নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোতেও। এখানকার বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বিনামূল্যের এসব বই। নীলক্ষেতের নান্দনিক বুক সেন্টার-২ এর মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের বই পাওয়া যাচ্ছে। তবে ইংরেজি ভার্সনের বইগুলোর দাম বেশি।
এ ব্যপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নারায়ণ চন্দ্র সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। এর আগে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এসব বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ এবং দণ্ডণীয় অপরাধ বলে তিনি জানান।
বছরের প্রথমদিন ১ জানুয়ারি রাজধানীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা করে কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসবের আয়োজন করে। এতে রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। একই সময়ে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে বিনামূল্যে এসব বই বিতরণ করা হয়। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।