বন্ধ হয়ে গেছে ব্র্যাকের ৩০ হাজার প্রাথমিক স্কুল
১৯৮৫ সালে দেশে ২২টি এক শ্রেণিকক্ষ স্কুল নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক শুরু করে প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে এই কার্যক্রম হাতে নেয় ব্র্যাক। ২০০৫-০৬ সালের দিকে ব্র্যাক পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০ হাজার। কিন্তু বিদেশী অনুদান কমে যাওয়া ও সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্র্যাকের এসব স্কুল।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ব্র্যাক পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজারের কিছু বেশি। সে হিসাবে গত এক যুগে ব্র্যাক পরিচালিত প্রায় ৩০ হাজার স্কুলই বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত কয়েক বছরের বিদ্যালয়শুমারিতেও ব্র্যাকের স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। গত কয়েক বছরের শুমারির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি বছরই ব্র্যাকের বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৫ সালে দেশে ব্র্যাক পরিচালিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১৩ হাজার ৫২২টি। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৬৭টিতে। ২০১৭ সালে দেশে ব্র্যাক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ১২ হাজার ৩৯৪টি। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩১৮টিতে।
ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার দাতা সংস্থাগুলো কয়েক বছর ধরে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে ব্র্যাকের অনুদান প্রাপ্তির হার প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণেই স্কুলগুলোর কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হচ্ছে বেসরকারি এ সংস্থাকে।
এ বিষয়ে ডা. মুহাম্মদ মুসা বলেন, দাতা সংস্থাগুলো অনুদানের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক কৌশলী হয়েছে। অনুদান কমিয়ে দিয়েছে বিষয়টি তেমন নয়। তবে অনুদানের খাত ও অঞ্চল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
তবে বেশির ভাগ স্কুল বন্ধ হয়ে গেলেও শিশু নিকেতন নামে শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করছে ব্র্যাক। তবে এক্ষেত্রে সব খরচ বহন করতে হয় অভিভাবকদের। তাই শিশু নিকেতনে খুব বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এক সময় দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল বেসরকারি খাতে। যেসব এলাকায় সরকারি বিদ্যালয় করা যায়নি, সেসব এলাকায় দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক সহায়তায় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করত। তবে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এখন সে চিত্র বদলে গেছে। শিক্ষাখাতে সরকারের উন্নয়নের ফলে এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলোর প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলো ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।