০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:০৫

প্রাথমিকের অর্ধেক শিক্ষকেরই প্রশিক্ষণ নেই

  © ফাইল ফটো

শিশু জীবনের শুরুতে গুনগত মানের প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এক বাক্যে সকলই স্বীকার করে নেয়। এ মান নিশ্চিত করার জন্য শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের গুণগত মান বাড়ানো দরকার। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫০ শতাংশ। এ দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনো সারা বিশ্বে পিছিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং (জিইএম) প্রতিবেদনে এ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। 

চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে মোট  ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি মিলে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৩৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৩৮ ও ছাত্রী সংখ্যা ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩১২। এ শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নিয়োজিত ৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষক। 

জিইএম কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনটি বলছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫০ শতাংশ। যদিও প্রতিবেশী নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরে এ হার ৯০ শতাংশের বেশি। এছাড়া শ্রীলংকায় প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের ৮৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ৮২ ও ভারতের ৭০ শতাংশেরই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ রয়েছে। এর বাইরে ভুটান, জর্ডান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগই প্রশিক্ষিত।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বীকার করেন, বাংলাদেশে শিক্ষক সংখ্যার তুলনায় প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততার রয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব  এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে একজন শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর পরই  ডিপিইডি ও সি-ইন এড প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তবে সপ্তাহব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়। এ প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়। তবে অল্প সময়ের এ প্রশিক্ষণ গুণগত পাঠদানের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে না।

শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের গুণগত মান নিশ্চিত করতে শিক্ষকের প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূণ মনে করেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের আগে এ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের সনদ নিতে হয় বলেও জানান তারা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুধু প্রাথমিক নয়, শিক্ষার প্রতিটি ধাপেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। নিয়োগের শর্ত হিসেবে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।