ছাত্র-ছাত্রী হারাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মানিকগঞ্জের নিমতা প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণীর একটি কক্ষে একজনমাত্র ছাত্রকে পড়াতে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে। অথচ ওই শ্রেণী কক্ষে বিশ থেকে ত্রিশজন শিক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা রয়েছে। অবকাঠামো এবং শিক্ষক থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী নেই বিদ্যালয়টিতে।
শুধু মানিকগঞ্জের ওই বিদ্যালয়ই নয়, সারা দেশে ৫ হাজারের অধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১০০জন ছাত্র-ছাত্রীও নেই। ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নেই এমন স্কুলের সংখ্যা ৪৪৬টি। দেশের জন্যসংখ্যা দিনে দিনে বাড়লেও গত পাঁচ বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমেছে ২৩ লাখ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে|
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই অবস্থার জন্য নিম্ন জন্ম হার দায়ী বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লখ করা হয়। তবে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর এ দুর্দশার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব, অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটকে দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ। কিন্তু গত বছর তথা ২০১৭ সালে সংখ্যাটি কমে দাড়িয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখে। চার বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমেছে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার। অথচ এই চার বছরের ব্যবধানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে আগের চেয়ে ২৭ হাজার ৪২টি। বর্তমানে দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ টি। ২০১৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৯টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৫ হাজার ৩৬টি বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোর ছাত্র সংখ্যা ১০০ জনেরও কম। এমন স্কুলগুলোর মধ্যে ২টি স্কুলে ১০ জনের চেয়ে কম ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এছাড়া ২৩টি স্কুল রয়েছে যেগুলোর ছাত্র সংখ্যা ২০ জনের চেয়ে কম। ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীও নেই এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৪৪৬টি। ছাত্রছাত্রী কমে যাওয়ার কারণে হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে|
বিশেষজ্ঞরা জানান, সরকারি স্কুলের অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত শিক্ষক ও মানসম্পন্ন পাঠদানের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পাঠান। অন্যদিকে অনেক অভিভাবক ধর্মীয় ও আর্থিক সংকটের কারণে তাদের ছেলে মেয়েকে মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০১৭ সালে দেশের মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং কিন্ডারগার্ডেন ছিল। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৬৪টি স্কুলে মোট শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র তিন জন। এছাড়া ২জন করে শিক্ষক ছিল ৭২১ স্কুলে এবং ৭৯ স্কুল পরিচালিত হয়েছে মাত্র ১জন শিক্ষক দিয়ে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করলেও স্কুল সংখ্যা ও ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন এন্ড স্ট্যাটেসটিকস এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৭৮টি নিবন্ধিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে স্কুল সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১৪৭টিতে। আর শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে এখন ৮০ হাজার ৫১১জন।
অন্যদিকে সরকারি কোন সংস্থার সাথে নিবন্ধিত না থাকায় কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে সারা দেশে প্রায় ১৪ হাজার কাওমি মাদরাসা রয়েছে।