সাধারণ ছুটিতে পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ চালানোর নির্দেশ, বিপাকে সুপার-ইনস্ট্রাক্টররা

  © ফাইল ফটো

চলমান আন্দোলনের জেরে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও দেশের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের বিটিপিটি প্রশিক্ষণের ক্লাস চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা থেকে বিভাগীয় উপপরিচালকদের কাছে মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও সাধারণ ছুটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ চালানোর নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন পিটিআইগুলোর সুপারিনটেনডেন্ট ও ইনস্ট্রাক্টররা।

তারা বলছেন, পিটিআইগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীরা আবাসিকভাবে অবস্থান করলেও ইনস্ট্রাক্টররা আবাসিক নন। তাই কিভাবে ক্লাস চালাবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে রবিবার (৪ আগস্ট) সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এদিন সারাদেশে সর্বশেষ ৯১ জন নিহত ও কয়েকশ আহতের খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার মোট তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এদিন মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ফেনী পিটিআইতে হামলা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিন সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন পিটিআই সুপার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সাধারণ ছুটির মধ্যে প্রশিক্ষণের ক্লাস চালাতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কর্তাদের যুক্তি, পিটিআই আবাসিক প্রতিষ্ঠান, তাই সাধারণ ছুটি হলেও ক্লাস চালাতে হবে। কারণ একদিন বিটিপিটি কোর্সের ক্লাস না চালানো কোর্সের মেয়াদ একদিন বেড়ে যাবে। তাই অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা থেকে পিটিআইতে ক্লাস চালানোর নির্দেশনার বিষয়ে বিভাগীয় উপপরিচালকদের জানানো হয়েছে। বিভাগীয় উপপরিচালকরা সুপারদের টেলিফোন করে ক্লাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

একজন পিটিআই সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিটিআইগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীরা আবাসিক। তবে পিটিআই সুপাররা আবাসিক হলেও ইনস্ট্রাক্টররা আবাসিক নন। সারাদেশেরই সহিংস পরিবেশ বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে ইনস্ট্রাক্টররা কী উপয়ে আসবেন আর কী করে ক্লাস চালাবো কিভাবে তা বুঝতে পারছি না।

অপর এক পিটিআই সুপার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিটিআইগুলো প্রশিক্ষণার্থী ও সুপারদের জন্য আবাসিক হলেও ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য আবাসিক নয়। সাধারণ ছুটিতে সুপার ও প্রশিক্ষণার্থীরা পিটিআই ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও ইনস্ট্রাক্টররা তা করবেন না। কোন আদেশ জারি না করে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলায়-জেলায় সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে ইনস্ট্রাক্টররা কিভাবে আসবেন সে প্রশ্ন তুলেছেন। পথে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কয়েকজন পিটিআই সুপারের দাবি, এর আগে ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটিতে পিটিআইগুলোতে প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সামাদ সুপারদের ওপর বেজায় চটেছেন। কার নির্দেশে পিটিআইগুলোকে প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকলো সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে রবিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর সুপাররা প্রশিক্ষণ নিয়ে নির্দেশনা চান। পরে প্রশিক্ষণ শাখা থেকে বিভাগীয় উপপরিচালকদের টেলিফোন করে পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে কিভাবে ইনস্ট্রাক্টররা পিটিআইতে আসবেন আর সুপাররাই কিভাবে ক্লাস চালাবেন তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মো. আব্দুস সামাদের দাপ্তরিক মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক মো. ইমামুল ইসলামও তার দাপ্তরিক মুঠোফোনে সাড়া দিচ্ছেন না।

তবে, প্রশিক্ষণ শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই। অফিস প্রধান যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই কাজ করতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিটিআইগুলো আবাসিক, তাই বিটিপিটির প্রশিক্ষণ চালাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

প্রশিক্ষণার্থী ও সুপার আবাসিক হলেও ইনস্ট্রাক্টররা আবাসিক নন, তারা কী করে পিটিআইতে আসবেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ইনস্ট্রাক্টররা আবাসিক না হলেও তারা জেলা শহরে পিটিআইয়ের আশপাশেই থাকেন। তাদের জন্য পিটিআইতে আসা খুব ঝামেলার হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ